শিশুদের পাকস্থলীতে ঘা বা আলসারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। জুস, চিপস, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই, টেস্টিং সল্ট ও ফাস্টফুডে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এই কেমিক্যালযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে বর্তমানে দেশে ৭৫ ভাগ শিশু আলসারে আক্রান্ত হয়েছে।
আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়। এছাড়া দীর্ঘদিনের আলসার বা অন্ত্রের ঘা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পাকস্থলী ছিদ্র হওয়ার শঙ্কা থাকে। এমনকি বিভিন্ন নালি সরু হয়ে কিডনি ও অন্ত্রে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এসব খাবার পরিহার করে শিশুদের ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভবিষ্যতই যেন ধ্বংস হতে বসেছে। ভেজালে ভরা খাদ্য বাজারে। আমরা সবাই ভুগছি নিরাপত্তাহীনতায়, তবে সব থেকে বিপদের মধ্যে রয়েছে শিশুরা। মানবতা বিবর্জিত কিছু মানুষ শিশু খাদ্যকেও ভেজাল থেকে নিস্তার দিচ্ছে না। তারা অতি মুনাফার লোভে খাবারের নামে শিশুদের বিষ খাওয়াচ্ছে। ফলে আজকাল বাবা-মাকে শিশুর জন্মের আগে থেকেই তার নিরাপদভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে থাকতে হয় দুশ্চিন্তায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে পেট ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি তিন শিশুর মধ্যে এক জনের এ রোগ ধরা পড়ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ জানান, দেশে তিন জন শিশুর মধ্যে এক জন আলসারে আক্রান্ত। পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসা শিশুদের ৪২ থেকে ৪৫ ভাগই আলসারে ভুগছে। জুস, চিপস, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই, টেস্টিং সল্ট—এগুলোতে এক ধরনের কেমিক্যাল থাকে। যে সব শিশু এসব খাবার খায়, তারা ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকে, আবার পেটে ব্যথা দেখা দেয়। এসব কেমিক্যালযুক্ত খাবার শিশুরা অব্যাহতভাবে খেতে থাকলে কিডনি ও অন্ত্রে ক্যানসার হতে পারে। এটা হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ ভাগ। এছাড়া এক সময় পাকস্থলী ছিদ্র হতে পারে।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, কেমিক্যালযুক্ত বাজারের জুস, চিপস, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই, টেস্টিং সল্ট খেলে শিশুদের যে আলসার হতে পারে বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এটা শতভাগ সঠিক। অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। এসব খাদ্য দেহের উপকারী জীবাণু নষ্ট করে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। হজমশক্তি হ্রাস পায়। বুদ্ধিমত্তা কমায়। মেজাজ খিটখিটে হয়। এছাড়া ক্যানসার ও ডায়াবেটিস হতে পারে অল্প বয়সে। বর্তমানে শিশু ক্যানসার ও ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এই কেমিক্যালযুক্ত খাবার। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী জনবল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই শিশুদের ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে শিশুদের জিনগত পরিবর্তন করে ক্যানসার সৃষ্টি করছে দূষিত খাবার। ভেজাল খাবার খাওয়ার ফলে শিশুদের পেটের পীড়া, পেটে ঘা, আলসার, চর্মরোগ এমনকি মৃত্যু হতে পারে। দূষিত খাবারে বাচ্চাদের দেহকোষ, মস্তিষ্ক, কিডনি ও লিভার সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেখা দিচ্ছে হাঁপানি রোগ, তাদের রক্ত চলাচলেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় শিশুদের আচরণগত সমস্যার জন্যও ভেজাল খাবারকে দায়ী করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে সেগুলোকে করা হচ্ছে আরও বিষাক্ত। আর বিক্রেতাদের দাবি, এসব খাবার তৈরিকারী কোম্পানির টার্গেট প্রধানত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত । তাদের জন্যই গলির দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত এসব খাবারের পসরা দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে এসব বিষাক্ত খাবারের বিক্রি সর্বাধিক।