চাকরির বাজারে দাবি উঠেছে কোটা চলবে না! সরকার বলছে কোটাতেই জয় গুরু। আদালত বলছে পাঁচ ভাগের বেশি না।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে খেলা সরকার শুরু করেছে, তাতে আর কিছুদিন পরে সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা যদি ঘৃনার চরিত্রে পরিনত হয়, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না বলেই মনে হয়। জোর করে সম্মান অর্জন হয় না, এভাবে যা অর্জন হয় তা আতঙ্ক আর ঘৃণা। সরকার কি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘৃণার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেনা, এসব করে?
যে দেশে ১০০% চাকরি হয় টাকার বিনিময় সে দেশে কোটা থাকলে কি না থাকলেই বা কী? টাকা দিয়ে কেনা পদে মেধার মূল্য কোথায়? আর যারা কোটা আন্দোলন করেছে তারা কী নিশ্চিত যে কোটা তুলে দিলে তারা সবাই বা বড় একটা অংশ কোন রকম উপরি চাহিদা না মিটিয়েই চাকরি পেয়ে যাবে?
এখন প্রযুক্তির দখলে বিশ্ব, কেউ যদি নিজেকে সেই পথে দক্ষ করে তুলতে পারে তার জন্যতো কোটা কোন ব্যাপার না। একটা চাকরির নিশ্চয়তা পেতে জীবনটা এমন হুমকির মুখে না ফেলে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারলে কে কোটা পেল আর কে কোটা পেল না তা নিয়ে ভাবতে হবে না ছাত্রদের। তাই আন্দোলন না, নিজেকে যোগ্য করাই আসল ব্রত হওয়া উচিত ছিলো তাদের। এমন আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ যুক্ত থাকে কিন্তু ফল ভোগ করে হতে গোনা ৩/৪ জন, তারাই এর অর্জন লুটেপুটে খায় সেটাকী এই হাজার হাজার অংশগ্রহণকারী কামনা করে? করার কথা না, এই যে কয়েক শত মানুষ নিহত হয়েছে, তারা নিজের জীবন দিল কার জন্য? কী লাভ হলো তাদের? তাদের পরিবার এই ক্ষতি কী দিয়ে পূরণ করবে?
এর আগে ৩টা আন্দোলন হয়েছে, যেগুলোর একটা থেকেও সাধারণ মানুষের এক বিন্দুও কী লাভ হয়েছে? ২০১৩-র প্রথমটাতে সমন্ময়কারী টিভিতে টকশো মেরে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে ভর দিয়ে নেতা হয়ে গেলো (সে আন্দোলনের ভালো অর্জনটুকু পুরোটাই একা খেয়ে নিলো)! আর অপরিচিত আঞ্চলিক এক সংগঠণ হেফাজত জাতীয় ভাবে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিনত হয়েছে। তাদের মাধ্যমে সংগঠিত অরাজকতা ও কূপমণ্ডূকতায় দেশের সার্বিক দর্শনের যে ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার কী সেই ১৩ সালের অংশগ্রহণকারীরা এড়াতে পারে? হেফাজতের এই উত্থানের দায়বার সাহবাগ আন্দোলনের সকল অংশগ্রহণকারীর।
২০১৮ সালে আরও একটা কোটা আন্দোলন হয়েছিলো, সেখান থেকে এক মেধাহীন সংগঠক উঠে এসে কি কি করেছে সবাই জানি। সে আন্দোলনও ব্যার্থ হয়েছে কিন্তু যেটুকু অর্জন ছিলো তা সেই নুরুর।
এখন আবার তেমন ভুল(!) করলো ছাত্ররা, এখানে যারা আহত হয়েছে তারা এর ক্ষত বয়ে বেড়াবে হয়তো সারা জীবন, কী লাভ হবে তাদের?
আন্দোলন যে এতোটা ভয়ঙ্কর আকার নিলো জনগণের টাকায় নির্মিত স্থাপনা, অফিস, গাড়ি ধ্বংস করা হলো এর দায়ভার কার কাদে দেবে তারা? বুঝলাম ছাত্ররা ভাঙচুড় করেনি, তবে প্লাটফর্মতো তারাই প্রস্তুত করেছে যেটা সরকার এগিয়ে নিয়েছে।
এমন ভয়াবহ অবস্থা আমরা আর দেখতে চাই না, এই দেশ খেটে খাওয়া মানুষদের। ছাত্ররাতো বটেই, প্রেসিডেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন পর্যন্ত সবাই এই খেটে খাওয়া মানুষদের শ্রমে অর্জিত সম্পদেই সুখ চালায়। খেটে খাওয়া মানুষরা বিনা-অপরাধে আয়ের পথ হারিয়ে অসহয় জীবনযাপন করছে তার সমাধান কী?
এই আন্দোলনে সরকারের কী লাভ? সরকার কেন আন্দোলনটাকে বাড়তে দিলো? এমন একটা সর্বগ্রাসী অরাজকতায় সাধারণত দুষ্কৃতিকারীরা তাদের এজেন্ডা নিয়ে প্রবেশ করে এমন আন্দোলনকেতো বটেই এমন কী দেশকেই অরাজকতার দিকে নিয়ে যায়। আগের দুইটা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এই আন্দোলন দানাবাধার আগেই সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিলো, তা না করে তারা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে গেলো। এতে প্রতিয়মান হয় এই সরকার একেবেরেই বিচক্ষণ না, এখানে ছাত্র ও সাধারণ মানুষরা যেটা করছে সেটা যদি অপরাধ হয় তবে সরকার যে এটা করতে দিয়েছে সেটা হলো মহা-অপরাধ।
এই যে এতোদিন ইন্টারনেট ছিলো না, এতো মানুষ কাজ করতে পারল না। এতোটা দিন বেকার কাটিয়ে দিলো লাখ লাখ মানুষ, এতে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে থাকলো এর দায় কার? কে শোধ করবে এর দায়?
এই যে কাণ্ডজ্ঞনহীন ভাবে ইন্টারনেট সার্ভার ধ্বংস করে দিলো, দেশের কয়েকটা সেক্টর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেলো এর উত্তর কারো কাছে আছে?
আমাদের যেহেতু কাগজে-কলমে গণতন্ত্র আছে সেহেতু আন্দোলন, মিছিল-মিটিং থাকবে। প্রতিবাদ থাকবে। তাই বলে আমাদেরও দেশের সম্পদ ধ্বংসের অধিকার নাই এবং তা থাকার কথাও না।
সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে যদি দেশের ক্ষতি করি সেটাও কাম্য না। সরকার আর দেশ এক না।
দেশের এই ক্ষতিতে সরকারের কোন ক্ষতি নাই। তারা এটা দেশের টাকাতেই আবার মেরামত করবে, আর সেই মেরামতের সময় যারা এটা পরিচালনা করবে তাদের সম্পদ আরও বাড়বে এখান থেকে সরানো টাকায়। তবে এসব করে কার লাভ হলো?
জ্ঞনী-সাহসীরা জীবন বাজি ধরে পরিবর্তনের জন্য, তারা সমাজ পাল্টায়। আর হঠকারিরা জীবন বাজি ধরে সমাজ ধ্বংস করে। এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা যা করছি তা কোন দিকে যাচ্ছে? যদি আমাদের কাজ থেকে ভালো ফল লাভের আশা কম থাকে তবে আমাদের সমঝোতা করে চলাই বিচক্ষণতা।
ছাত্র সমাজ সব সমই একটু দামাল হয়ে থাকে তাই বলে সরকারও দামাল হতে পারে না, সেটা তাদের মানায় না, তাদের হতে হবে বিচক্ষণ, ধির-স্থির। তাদের হাতেই দেশ থাকে, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও তাদের হাতে, দামাল হলে চলেনাকী? কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী বরাবরই একটু দামাল টাইপের(!) বিচক্ষণতার থেকে আবেগটাই বেশি প্রদর্শণ করেন। তাকে দামাল না বিচক্ষণ হওয়ার পরামর্শ থাকলো।
ছাত্ররা তার সন্তান ও সন্তানের সন্তানদের মত, তাদের সাথেতো তার ফাইট করার কথা না। তাদের মাথায় হাত দিয়ে তার ভালোবাসার কথা শোনানোর কথা, তিনি তা না করে ছাত্রদের সাথে ফাইট করেছেন! এটা ঠিক হয়েছে তার? আশা করি তিনি তা ভেবে দেখবেন।
সরকার যেহেতু প্রথমে কোন পদক্ষেপ নিলো না, তাই এটা বেড়ে গেল। এর ফলে দুষ্কৃতকারিরা এর দখল নিয়েছে, আর তার ফলতো আমরা দেখেছি। এই ক্ষতি কতদিন ভুগতে হবে সে উত্তর কে দিবে?