ব্রিটেনে ২০২০ ও ২১ সালে কোভিড লকডাউনের সময় বিধিনিষেধ ভেঙে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অফিসে পার্টি করার ঘটনা নিয়ে এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর তার ওপর পদত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়িতে কীভাবে রাতভর ড্রিঙ্কিং পার্টি হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে কীভাবে অনেকে সেসব পার্টিতে বেসামাল আচরণ করেছেন – তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন সিনিয়র সরকারি আমলা সু গ্রে, যিনি এই তদন্ত রিপোর্টটি তৈরি করেছেন।
মিজ গ্রে তার রিপোর্টে মন্তব্য করেছেন সরকারের একদম শীর্ষ পর্যায়ে এমন আচরণ অনেক মানুষকে ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত করবে। পার্লামেন্টে বিরোধী লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার এ্যাঞ্জেলা রেইনার মন্তব্য করেছেন, প্রধানমন্ত্রী জনসনের অফিস ডাউনিং স্ট্রিটের মাথায় পচন ধরেছে।
এসব পার্টির বেশির ভাগই ছিল ডাউনিং স্ট্রিটের কোন কর্মকর্তার বিদায় উপলক্ষে বা কাজের শেষে একসঙ্গে বসে গলা ভেজানোর জন্য – আর একটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের পার্টি ।
যখন এসব পার্টি হচ্ছিল – তখন সারা ব্রিটেন জুড়ে লকডাউন চলছে, বা জনসমাগমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ জারি আছে। সেসময় ব্রিটেনে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে বহু লোক তাদের মরণাপন্ন আত্মীয়স্বজনকে দেখার সুযোগও পান নি। সেই অবস্থার মধ্যেই ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি চলার এসব খবর বেরুলে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
ওই পার্টিতে যোগ দেয়া লোকজন বিবিসির কাছে বলেছেন যে এসব পার্টিতে ৩০ জনেরও বেশি লোক ছিল। কোন সামাজিক দূরত্ব রাখা হয়নি, এত লোক ছিল যে একজনকে আরেকজনের কোলে বসতে হয়েছে এমনও ঘটেছে ।
পার্টিতে বিপুল পরিমাণ মদ পান করা হয়, আবর্জনা ফেলে অফিস নোংরা করা হয়। এত রাত পর্যন্ত পার্টি চলে যে অনেককে ডাউনিং স্ট্রিটেই রাত কাটাতে হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে এমন কিছু আচরণ করা হয়েছে যা মেনে নেয়া কঠিন। এসব পার্টিতে এত বেশি মদ্যপান করা হয়েছে যা কখনোই কোন পেশাদার কাজের জায়গায় সংগত নয়।
অতিরিক্ত মদ্যপান করেএকবার একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
কেউ এ নিয়ে আপত্তি করলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশাও করা হয়।
এক বছরের মধ্যে অন্তত ১৬টি পার্টি
সু গ্রে এই রিপোর্টের কিছু অংশ জানুয়ারি মাসেই প্রকাশ করেছিলেন, এখন তার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হলো।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০২১-এর এপ্রিল পর্যন্ত ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে মোট ১৬টি পার্টির ঘটনা এ রিপোর্টে স্থান পায়। এর মধ্যে ১২টি পুলিশ তদন্ত করেছে। এর কয়েকটিতে প্রধানমন্ত্রী যে উপস্থিত ছিলেন তার ছবিও জুড়ে দেয়া হয় রিপোর্টে।
এ জন্য ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সহ শতাধিক কর্মকর্তাকে জরিমানাও করেছে পুলিশ।
সু গ্রের রিপোর্টে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিভিন্ন অংশ এবং ক্যাবিনেট অফিস নেতৃত্ব এবং বিচারবুদ্ধির পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা ঘটতে দেয়া একেবারেই উচিত হয়নি।
রিপোর্টে বলা হয়, দেশের সরকারের একেবারে কেন্দ্রস্থলে যারা কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে – বা সামগ্রিকভাবে ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে – যে উচ্চ মানের আচরণ প্রত্যাশা করা হয় – এসব ঘটনায় তা পালন করার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। বলা হয়, ডাউনিং স্ট্রিটের ভেতরের বাগানকে কোন স্পষ্ট অনুমোদন ছাড়াই এসব সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যা যথাযথ হয়নি।
তীব্র নিন্দা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
সু গ্রের রিপোর্ট প্রকাশের পর পার্লামেন্টে বিরোধী দলের এমপিরা তো বটেই, এমনকি কনসারভেটিভ পার্টির কিছু এমপিও তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।
প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কির স্টার্মার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত তার ব্যাগ গুছিয়ে বিদায় নেয়া। তিনি কনসারভেটিভ পার্টির এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেন তাদের নেতাকে বলেন যে তার খেলা শেষ হয়ে গেছে।
লিবারেল ডেমোক্রট দলের নেতা স্যার এড ডেভি বলেন, বরিস জনসন ধরা পড়ে গেছেন বলেই এখন দুঃখ প্রকাশ করছেন ।
এসএনপির নেতা ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন এবং ডাউনিং স্ট্রিটে কাজের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে – “কারণ মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকেই।”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টে আবারও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি এসব ঘটনার “সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন, এবং এই রিপোর্ট থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করছেন,” তবে এখন এগুলো পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।
মি. জনসন আরো বলেন যে তিনি পার্লামেন্টকে জেনেশুনে বিভ্রান্ত করেননি। অর্থাৎ তিনি যে পদত্যাগ করবেন না দৃশ্যতঃ তারই ইঙ্গিত দেন তিনি।
মূল- bbcbangla – https://www.bbc.com/bengali/news-61583791
ব্রিটেনে ২০২০ ও ২১ সালে কোভিড লকডাউনের সময় বিধিনিষেধ ভেঙে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অফিসে পার্টি করার ঘটনা নিয়ে এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর তার ওপর পদত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়িতে কীভাবে রাতভর ড্রিঙ্কিং পার্টি হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে কীভাবে অনেকে সেসব পার্টিতে বেসামাল আচরণ করেছেন – তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন সিনিয়র সরকারি আমলা সু গ্রে, যিনি এই তদন্ত রিপোর্টটি তৈরি করেছেন।
মিজ গ্রে তার রিপোর্টে মন্তব্য করেছেন সরকারের একদম শীর্ষ পর্যায়ে এমন আচরণ অনেক মানুষকে ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত করবে। পার্লামেন্টে বিরোধী লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার এ্যাঞ্জেলা রেইনার মন্তব্য করেছেন, প্রধানমন্ত্রী জনসনের অফিস ডাউনিং স্ট্রিটের মাথায় পচন ধরেছে।
এসব পার্টির বেশির ভাগই ছিল ডাউনিং স্ট্রিটের কোন কর্মকর্তার বিদায় উপলক্ষে বা কাজের শেষে একসঙ্গে বসে গলা ভেজানোর জন্য – আর একটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের পার্টি ।
যখন এসব পার্টি হচ্ছিল – তখন সারা ব্রিটেন জুড়ে লকডাউন চলছে, বা জনসমাগমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ জারি আছে। সেসময় ব্রিটেনে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে বহু লোক তাদের মরণাপন্ন আত্মীয়স্বজনকে দেখার সুযোগও পান নি। সেই অবস্থার মধ্যেই ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি চলার এসব খবর বেরুলে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
ওই পার্টিতে যোগ দেয়া লোকজন বিবিসির কাছে বলেছেন যে এসব পার্টিতে ৩০ জনেরও বেশি লোক ছিল। কোন সামাজিক দূরত্ব রাখা হয়নি, এত লোক ছিল যে একজনকে আরেকজনের কোলে বসতে হয়েছে এমনও ঘটেছে ।
পার্টিতে বিপুল পরিমাণ মদ পান করা হয়, আবর্জনা ফেলে অফিস নোংরা করা হয়। এত রাত পর্যন্ত পার্টি চলে যে অনেককে ডাউনিং স্ট্রিটেই রাত কাটাতে হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে এমন কিছু আচরণ করা হয়েছে যা মেনে নেয়া কঠিন। এসব পার্টিতে এত বেশি মদ্যপান করা হয়েছে যা কখনোই কোন পেশাদার কাজের জায়গায় সংগত নয়।
অতিরিক্ত মদ্যপান করেএকবার একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
কেউ এ নিয়ে আপত্তি করলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশাও করা হয়।
এক বছরের মধ্যে অন্তত ১৬টি পার্টি
সু গ্রে এই রিপোর্টের কিছু অংশ জানুয়ারি মাসেই প্রকাশ করেছিলেন, এখন তার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হলো।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০২১-এর এপ্রিল পর্যন্ত ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে মোট ১৬টি পার্টির ঘটনা এ রিপোর্টে স্থান পায়। এর মধ্যে ১২টি পুলিশ তদন্ত করেছে। এর কয়েকটিতে প্রধানমন্ত্রী যে উপস্থিত ছিলেন তার ছবিও জুড়ে দেয়া হয় রিপোর্টে।
এ জন্য ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সহ শতাধিক কর্মকর্তাকে জরিমানাও করেছে পুলিশ।
সু গ্রের রিপোর্টে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিভিন্ন অংশ এবং ক্যাবিনেট অফিস নেতৃত্ব এবং বিচারবুদ্ধির পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা ঘটতে দেয়া একেবারেই উচিত হয়নি।
রিপোর্টে বলা হয়, দেশের সরকারের একেবারে কেন্দ্রস্থলে যারা কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে – বা সামগ্রিকভাবে ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে – যে উচ্চ মানের আচরণ প্রত্যাশা করা হয় – এসব ঘটনায় তা পালন করার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। বলা হয়, ডাউনিং স্ট্রিটের ভেতরের বাগানকে কোন স্পষ্ট অনুমোদন ছাড়াই এসব সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যা যথাযথ হয়নি।
তীব্র নিন্দা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
সু গ্রের রিপোর্ট প্রকাশের পর পার্লামেন্টে বিরোধী দলের এমপিরা তো বটেই, এমনকি কনসারভেটিভ পার্টির কিছু এমপিও তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।
প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কির স্টার্মার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত তার ব্যাগ গুছিয়ে বিদায় নেয়া। তিনি কনসারভেটিভ পার্টির এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেন তাদের নেতাকে বলেন যে তার খেলা শেষ হয়ে গেছে।
লিবারেল ডেমোক্রট দলের নেতা স্যার এড ডেভি বলেন, বরিস জনসন ধরা পড়ে গেছেন বলেই এখন দুঃখ প্রকাশ করছেন ।
এসএনপির নেতা ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন এবং ডাউনিং স্ট্রিটে কাজের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে – “কারণ মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকেই।”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টে আবারও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি এসব ঘটনার “সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন, এবং এই রিপোর্ট থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করছেন,” তবে এখন এগুলো পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।
মি. জনসন আরো বলেন যে তিনি পার্লামেন্টকে জেনেশুনে বিভ্রান্ত করেননি। অর্থাৎ তিনি যে পদত্যাগ করবেন না দৃশ্যতঃ তারই ইঙ্গিত দেন তিনি।
মূল- bbcbangla – https://www.bbc.com/bengali/news-61583791