গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যদিও আর্থিক এবং নীতি সহয়তার অভাবে এ খাতের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক খতিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক নথিপত্রের ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের সিএমএসএমই (কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তা) খাতের উদ্যোক্তাবৃন্ধ প্রায়শই ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকেন, এমতাবস্থায় তাদের প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা একান্ত জরুরি। সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের স্বনামধন্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রাপ্তির তথ্যসমূহের সন্নিবেশনের মাধ্যমে ঢাকা চেম্বার ‘সিএমএসএমই ঋণ প্রাপ্তির পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে, যেটি এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, কোভিড মহামারি পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপতি নানাবিধ অবরোধের কারণে গোটা পৃথিবীর সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে। ডেপুটি গভর্নর আরো বলেন, ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সেবা এবং উৎপাদনশীল খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের মাধ্যমে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধিতে ব্যাংকসমূহের এজেন্ট ব্যাংকিং-এর চেয়ে ‘উপ-শাখা’ কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এছাড়াও ঋণ প্রাপ্তির প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস’ এবং ‘ব্লক চেইন’ কার্যক্রমের ওপর বেশি হারে মনোনিবেশের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি ক্লাস্টারকে নির্বাচন করে দিয়েছে এবং দেশের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে উক্ত ক্লাস্টারভুক্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, দেশের সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ স্থাপনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করেছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই এসপিডি) মো. জাকের হোসেইন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার পৃথকভাবে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. জাকের হোসেইন বলেন, বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ এবং ২০২৪ ও ২০২৭ সালে এটি যথাক্রমে ৩২ ও ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এ খাতের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের কোন বিকল্প নেই । এ খাতের কোন উদ্যোক্তা যদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সমেত ঋণ আবেদন করলে, ঋণ মঞ্জুরে ব্যাংকসমূহের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন ।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, দেশে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭৮ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংই ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা হতে বঞ্চিত, এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত ধ্যান- ধারণার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। এছাড়াও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আহরণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন ।