ক্রেতা সংকটে দেশের শেয়ার বাজারে গতকাল রোববার (৮ অক্টোবর) মূল্যসূচকের বড়পতন হয়েছে। প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। এটি গত দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুদের হার বাড়ানোর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে নানা ধরনের গুজব রয়েছে বাজারে। গতকাল বাজারে লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ারের বিক্রয় চাপ ছিল। অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতে রাখতে চাইছেন। ফলে বাজারে বড়পতন হয়। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স ২৪.৪৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৩৭.২৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪.৫৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫১ পয়েন্টে ও ডিএসই-৩০ সূচক ৬.৯৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩০.৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন ডিএসইতে ৩৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এটি চলতি বছরের ২০ আগস্টের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গতকাল একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বললে বাজার নিয়ে তারা আস্থার সংকটের কথা জানায়। তাদের জিজ্ঞাসা বাজারে কী হবে? ইবিএল সিকিউরিটিজের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, বাজার কবে ভালো হবে?
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পাশাপাশি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরও কমেছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া মোট ২৯৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির, কমেছে ১৩৪টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪৯টির দর। দেশের প্রধান এই শেয়ার বাজারে গতকাল টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেমিনি সি ফুডের ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ। সিমেন্ট খাতের এই কোম্পানিটির ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৭৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
গতকাল বাজারের বড়পতন প্রসঙ্গে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, ব্যাংকের সুদ হার বাড়ানোর একটা নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির ঋণ রয়েছে। ব্যাংকের সুদ হার বাড়ানোর কারণে এই সব কোম্পানির আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার বেশি সুদ পাওয়ার কারণে শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলে কেউ কেউ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইবেন। এসব কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এটাতো বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, এক দিকে সুদ হার বেড়েছে, অন্যদিকে বাজারে ফ্লোর প্রাইসে অনেক শেয়ার আটকে আছে। ফলে সুদ হার বাড়ায় যেসব বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছে তারা আরও বেশি সমস্যায় পড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন শেয়ার বাজারে নতুন করে কেউ শেয়ার কিনতে চাচ্ছে না। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নীতি নিয়েছে।