ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের দায়ের করা দুই মামলায় বিচার শুরুর আগেই এক বছর ধরে কারাগারে বন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্বর্তী উপ-আঞ্চলিক পরিচালক নাদিয়া রহমান বলেন, বাংলাদেশে খাদিজার বছরব্যাপী কারাভোগ এবং তার জামিনের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান এটা স্পষ্ট মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। তার এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত, তার ডিগ্রির জন্য অধ্যয়ন করা উচিত। একটি কঠোর আইনের কারণে তার জেলে থাকার কথা নয়। তার ক্রমাগত নির্বিচারে আটক রাখায় সমালোচনাকারীদের কথা বলার স্থান সংকুচিত করেছে এবং যারা কর্তৃপক্ষের মতামতের সঙ্গে একমত নন, তাদের জন্য একটি শীতল অবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, সরকারের কঠোর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ মানবাধিকারকে ক্ষুণ্ন করতে এবং সমালোচনাকারীদের নিপীড়ন করতে আইনটি ব্যবহার করে চলেছে। খাদিজার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করুন এবং অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে অভিযুক্ত এবং আটক সবাইকে মুক্তি দিন।
২০২০ সালে খাদিজার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দুই বছর পর গত বছরের ২৭ আগস্ট পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিন থেকে সাত বছরের সাজা হতে পারে। গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (৪ মাস) তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ফলে খাদিজার আইনজীবীদের তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিচার শুরু হওয়ার আগেই খাদিজার এক বছরের কারাবাস তার মৌলিক অধিকার খর্ব করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিচারিক প্রক্রিয়াকেও। এই আইনের আওতায় এর আগেও দেশের অনেক মানুষ গ্রেপ্তার, কারারুদ্ধ ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এমনকি কারও কারও মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এটি মানুষের বাকস্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারসহ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
খাদিজা জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। দুটি মামলার এজাহারও প্রায় একই।
এজাহারে বলা হয়েছে, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
২০২২ সালে এই দুই মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে পুলিশ। পরে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত বছরের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সঞ্চালক খাদিজা গ্রেপ্তার হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো বিদেশে অবস্থান করছেন। বিচারিক আদালতে একাধিকবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগ ওই আদেশ চার মাসের জন্য মুলতবি রাখেন।