খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হলেও এখনো প্রচার-প্রচারণা জমে ওঠেনি। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় জমে উঠছে না বলে ধারণা করছেন সাধারণ নাগরিকরা। তবে, শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে মতবিনিময় করছেন। এদিকে, মেয়র প্রার্থীদের জোরালো তত্পরতা শুরু না হলেও সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের তত্পরতা আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে গত ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এছাড়া সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফফার বিশ্বাস, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, খুলনা জেলা সাম্যবাদী দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রকৌশলী সৈয়দ কামরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মেয়র প্রার্থী এস এম মুশফিকুর রহমান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগুয়ান-৭১-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই মেয়র পদে নির্বাচন করব। এছাড়া মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফফার বিশ্বাস। ইতিমধ্যে তার পক্ষে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে নগরীতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে কেসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি নগরীর গোয়ালখালীতে খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটির যৌথ সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আব্দুল আউয়াল বলেন, কেসিসি নির্বাচনটি স্থানীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
অন্যদিকে, কেসিসি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগুয়ান-৭১। সংগঠনটি মেয়র প্রার্থীসহ নগরীর ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দেবে। গত ২ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সে নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। তারপরও এটি স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় নির্বাচন। সেক্ষেত্রে দল যদি নতুনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নেব।
তবে, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, আমরা এ নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তাই করছি না। আমরা এ সরকারের বিদায় ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আন্দোলনে আছি। আমরা দাবি আদায়ের পরেই নির্বাচনে যাব।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, খুলনার মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে এবারও তালুকদার আব্দুল খালেককে মেয়র পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, মার্কা না পাওয়া পর্যন্ত জোরালোভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করা যাচ্ছে না। আগামী ১২ মে থেকে ১৬ মের মধ্যে আমি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করব। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করব। তিনি আরো বলেন, আমি চাই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকুক। আমার মতে বিএনপির নির্বাচনে আসা উচিত।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ৬৭ হাজার ৯৪৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, তপশিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন কেসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে এবং ২৫ মের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার।