যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ-অধিকৃত খেরসন পুনর্দখলের জন্য ইউক্রেনের প্রয়াসে গতিসঞ্চার হয়েছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার হাইমার্স রকেট ছোঁড়ার পর খেরসন শহরে ঢোকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তনভস্কি নামের একটি সেতু ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, এবং এর ফলে শহরটি অন্যান্য রুশ অধিকৃত এলাকা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সেতুটি বন্ধ হয়ে গেলে খেরসন দখল করে থাকা রুশ সৈন্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, এবং রাশিয়ার জন্য এটি হবে এক বিপর্যয়।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহর রুশ দখলে থাকা এলাকার অন্যান্য শহর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দনিপ্রো নদীর কাছে মোতায়েন থাকা হাজার হাজার রুশ সৈন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলছে যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী সম্ভবত ইনহুলেটস নদীর দক্ষিণ দিকে একটি শক্ত অবস্থান কায়েম করেছে এবং দনিপ্রো নদীর ওপরকার কমপক্ষে তিনটি সেতুর ক্ষতিসাধনের জন্য নতুন দূরপাল্লার কামান ব্যবহার করছে।
মস্কো-সমর্থক কর্মকর্তারা অবশ্য ইউক্রেনীয় বাহিনী ইনহুলেটস অতিক্রম করেছে এমন খবর অস্বীকার করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, খেরসন শহরটিতে তাদের দখল টিকিয়ে রাখতে তড়িঘড়ি করে পূর্ব দিক থেকে রুশ সৈন্যদের নিয়ে আসা হচ্ছে।
খেরসন শহরের দখল হারালে পুরো ডনবাস দখল করার জন্য ভ্লাদিমির পুতিনের যে পরিকল্পনা তা থমকে যাবে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহরের জনসংখ্যা ছিল যু্দ্ধের আগে দুই লাখ ৯০ হাজার। যুদ্ধের প্রথম দিকে রাশিয়া শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেবার পর থেকে স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে আছেন রুশ সমর্থিত কর্মকর্তারা। যুদ্ধের গোড়ার দিকে, প্রায় কোনরকম প্রতিরোধ ছাড়াই রাশিয়ান সৈন্যরা খেরসনের দখল নিতে সক্ষম হয়।
গত সপ্তাহে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল লক্ষ্য এখন শুধু ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলই নয়, বরং তারা এখন দক্ষিণে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার দখলের দিকেও তাদের অভিযান কেন্দ্রীভূত করছে।
রাশিয়ার তাস সংবাদ সংস্থার এক খবরে বলা হয়েছে, খেরসন শহরকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সাথে যুক্ত করার জন্য শহরের কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক কয়েক দিনে একটি গণভোট অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছেন। এর জন্য কর্তৃপক্ষ একটি নির্বাচন কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনীয় সূত্রগুলো বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার স্থল অভিযান অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে এবং রুশ বাহিনী এখন ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলার আশ্রয় নিয়েছে।
দক্ষিণের মিকোলাইভ অঞ্চলের গভর্নর বলছেন, রুশ হামলায় আবাসিক ভবন, স্কুল ও খামারের ডিপো আক্রান্ত হচ্ছে। মিকোলাইভে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি স্কুল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
পূর্ব দিকের খারকিভ শহরেও গত রাতে বাড়িঘর এবং শিল্প কারখানার ওপর গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।
রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী কিছু শহরও আক্রান্ত হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, চেরনিহিভ অঞ্চলে বেলারুস থেকে নিক্ষিপ্ত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। এর মধ্যে নয়টি একটি জঙ্গলে গিয়ে পড়েছে। বিস্তারিত আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে রুশ বাহিনী বলছে, পূর্ব দোনেৎস্কের সভিৎলোডারস্ক শহরে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুত কেন্দ্রটি তারা দখল করে নিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এটিই রাশিয়ার প্রথম কোন কৌশলগত বিজয়।
সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা স্যার রিচার্ড ব্যারনস বলছেন, ইউক্রেনকে দেয়া পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্রগুলো যুদ্ধে কিছুটা পার্থক্য তৈরি করতে পেরেছে, কিন্তু এর পরিমাণ – রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতার তুলনায় অনেক কম।