গত বছর ২০২১ সালে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছিল ২২ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল শেষে এই অঙ্ক ২১ বিলিয়নে নেমে আসার পূর্বাভাস দিল বিশ্বব্যাংক।
সংস্থাটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ব্যাকিং চ্যানেলের বাইরে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স আসছে দেশে। এর ফলে অন্তত ৭ শতাংশ কম আসবে ব্যাংকিং চ্যানেলে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ফলে ব্যালেন্স-অব-পেমেন্টে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্সে গতি বাড়াতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বিদেশিদের জমানো অর্থে সুদ হারও বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে প্রমাণপত্র দেখানোর বিধি নিশেষও তুলে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও গত বছরের তুলনায় কম রেমিট্যান্স আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর প্রবাসী আয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘অভিবাসন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (নোমাড) এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এখন বিশ্ব জুড়েই প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনক্তির চাহিদা বাড়ছে। জরিপ করে দেখা গেছে, শ্রমবাজারে ৭০ শতাংশ এখন ডিজিটাল জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া জরুরি। তবে আশার দিকও রয়েছে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরই নয়, সম্প্রতি বসনিয়া এবং হারজেগোভিনাতে বাংলাদেশি প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন শ্রমিকও নিয়োগ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ২২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। সেই সুবাদে ঐ বছরে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। চলতি বছর শেষে তা ১২০ কোটি বা ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার কমে ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। আর এতে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে নবম স্থানে নেমে আসবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৭৫ কোটি (২১.৭৫ বিলিয়ন) ডলার। গত মার্চ মাসে ২৪ শতাংশ উল্লম্ফন ছাড়া গত ১০ মাসে দেশে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। এপ্রিলে ২০১ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কম। গত বছরের এপ্রিলে ২০৭ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। সবশেষ অক্টোবর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার। গত বছরের অক্টোবরে এসেছিল ২১০ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ নবম: ২০২২ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে শীর্ষ স্থানে থাকবে ভারত। চলতি বছর দেশটিতে রেমিট্যান্স আসবে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার। গত বছর দেশটিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। একই সময়ে চীনকে ছাড়িয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মেক্সিকো। দেশটিতে রেমিট্যান্স আসতে পারে ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। গত বছর পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়া চীনের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২০২১ সালে ছিল প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে হবে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপাইন ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নিয়ে চতুর্থ ও ৩ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার নিয়ে মিশর পঞ্চম স্থানে থাকবে। ফ্রান্স ষষ্ঠ (৩ হাজার ১০০ কোটি), পাকিস্তান সপ্তম (২ হাজার ৯০০ কোটি), জার্মানি অষ্টম (২ হাজার ১১২ কোটি), বাংলাদেশ নবম (২ হাজার ১০০ কোটি ডলার) স্থানে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।