শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্ত চলাচল ঠিক রাখা, সুষ্ঠুভাবে পরিপাক ও রেচনক্রিয়া পরিচলনসহ গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া সম্পাদনে পর্যাপ্ত পানি পান করা দরকার সব বয়সি মানুষের ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে চলমান এ গরমের সময়ে এর ব্যত্যয় ঘটলে দেহযন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও পড়বে বিরূপ প্রভাব। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি পান করি, বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া সম্পাদনের সময় যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলার সময় বাষ্পীভূত হয়ে, ইউরিন ও ঘামের মাধ্যমে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি যখন শরীর থেকে বের হয়ে যায়, তখন শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। এ প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ অপসারণের মাধ্যমেও ‘বডি ফ্লুইড‘ কমে যায় এবং এর ফলে দেহকোষ থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ডিহাইড্রেশন বলে।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাইকোলজি অব বডি ফ্লুইড‘ বিষয়ক গবেষণাকর্মের তথ্যমতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এ পানির পরিমাণ দেহের মোট ওজনের প্রায় ৬০ ভাগ। পানির ৭০ ভাগ আবার দেহকোষেই থাকে এবং বাকি ৩০ ভাগ থাকে রক্তনালিতে। এ কারণেই যখন অত্যাবশ্যক এ উপাদানটির সরবরাহ পরিমিত না হয়, তখনই কোষগুলোতে এর অভাবের ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। এছাড়া মানবশরীরে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে পরিচিত সোডিয়াম, ক্লোরিন এবং পটাশিয়াম লবণসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রেও পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলেকট্রোলাইট সলিউট বা দ্রব হিসেবে দেহকোষের ভেতর ও বাইরে প্রবাহমান পানির গতিবিধি ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
রসায়নের পরিভাষায় অসমোসিস নামে পরিচিত এ প্রক্রিয়ায় যখন শরীরে পানির স্তর কম থাকে, তখন এই ইলেকট্রোলাইট দ্রবণের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় পুনরায় পানি পানের মাধ্যমে দেহের অন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতো দেহকোষের পুষ্টি উপাদান শোষণ ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। কোনো কারণে যদি শরীরে পানি সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম হয় যেমন মুখ দিয়ে গিলতে অক্ষমতা, ডায়রিয়া, জ্বর অথবা অত্যধিক ঘামের ফলে ইলেকট্রোলাইট দ্রবণের ঘনত্ব তখন খুব বেশি হয়ে যায়। ডিহাইড্রেশনের কারণে দুর্বলতা, মানসিক চাপ, রাগ এবং নেতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি হতে পারে। মাংশপেশির ক্রাম্পসহ কখনো কখনো এ পরিস্থিতি ব্যক্তির জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে।
তাই বর্তমানে গরম আবহাওয়া ও মুসলিমদের সিয়াম সাধনার এ মাসে নিয়ম করে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। রোজা রেখে শরীরের যে পরিমাণ তরল ক্ষয় হয়, সেটা মাথায় রেখে এবং পানি নিরোধ হওয়া বা ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পেতে খনিজ লবণসমৃদ্ধ খাবার ও ফলমূল অপরিহার্য। অনেকে বাড়তি পানি পানের নামে বেশি বেশি চা ও কফি খেয়ে থাকেন, যা শরীরের জন্যে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ এসব পানীয় হলো এক ধরনের ডাইউরেটিক জাতীয় যা প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে পানির নির্গমন বাড়িয়ে দেয়। তাই চা ও কফির পরিবর্তে গরম দুধ, সুপ এবং ফলের রসও হতে পারে ভালো বিকল্প।