বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটতারকা স্যার গর্ডন গ্রিনিজের নামটা গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের কথা লিখতে গেলে গর্ডন গ্রিনিজের নাম আসবেই। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের কোচ ছিলেন গর্ডন। সেই মানুষটি বাংলাদেশে আসলেই তাকে নিয়ে আগ্রহ থাকে ক্রিকেট অঙ্গনের মানুষের। গর্ডন গ্রিনিজ আবারও এসেছেন ঢাকায়। বাংলা একাডেমির আঙিনায় আয়োজিত ঢাকা লিট ফেস্টের চতুর্থ ও শেষ দিনে ‘আই অন দ্য বল’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে কথা বলেন গর্ডন গ্রিনিজ। সেখানেই বলছিলেন তার কাছে সেকেন্ড হোম বাংলাদেশ।
গর্ডনের সঙ্গে এসেছেন আরেক ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার হ্যামিল্টন মাসাদকাদজা। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটেও খুব পরিচিত। শেষ ম্যাচ বাংলাদেশে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন দেশীয় সিরিজ খেলে ক্যারিয়ারে ইতি টেনে ছিলেন মাসাকাদজা। তার মুখেও শোনা গেল একই কথা। মাসাকাদজার কাছেও বাংলাদেশ সেকেন্ড হোম। গর্ডন গ্রিনিজ ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বিজয়ী বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবনে হ্যামিল্টন মাসাকাদজাও স্বদেশ জিম্বাবুয়ের পর বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন।
বাংলা একাডেমির আব্দুর করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে মঞ্চে ঢাকা লিট ফেস্টের অনুষ্ঠানে গর্ডন গ্রিনিজ, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেট তারকা ইউসুফ রহমান বাবু। তার উদ্যোগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত ‘আই অন দ্য বল’ বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে শনিবার। সেই গ্রন্থের নামেই এ আলোচনা অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সবাইকে শুভ অপরাহ্ন বলে গর্ডন গ্রিনিজ কথা বলা শুরু করেন, ‘বাংলাদেশে আবার এসে ভালো লাগছে এটি আমার দ্বিতীয় দেশ। আমি এখানে এসেছি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে এবং এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে। এদেশে আমি আড়াই বছর ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। সে সময় আমি অনেক বন্ধু বানিয়েছি। এখনো তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়।’
এক পর্যায়ে সঞ্চালক বাবু গর্ডন গ্রিনিজকে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি ভারতের কাছে হারার কারণ জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে যে কোনো দিন যে কোনো দলকে হারাতে পারে। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, আমরা কীভাবে হেরে গিয়েছিলাম।’ এ সময় গর্ডন ক্রিকেটের সাম্প্রতিক পরিবর্তনেরও সমালোচনা করেন। ক্রিকেট অনেকটাই ব্যাটারদের হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বোলার ও ব্যাটারদের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা উচিত।’
১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে মাঠ কাঁপানো ডানহাতি ওপেনিং ব্যাটার ছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ। তবে বিশ্বসেরা ক্রিকেটারের পরিচয় ছাপিয়ে বাংলাদেশের কাছে তিনি পরিচিত কোচ গর্ডন গ্রিনিজ হিসেবে। মূলত আইসিসি ট্রফি জয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল জনতার হৃদয়ে জায়গা করে নেন গর্ডন। ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয় তৎকালীন সরকার।