হামাস-ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে বিধ্বস্ত গাজায় তীব্রতর হচ্ছে মানবিক সংকট, সেইসঙ্গে বাড়ছে ইসরায়েলে হামলা ও সামরিক অভিযান। যুদ্ধের কারণে আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের সরানো এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহলে সহায়তার জন্য যুদ্ধবিরতির কূটনীতিক প্রচেষ্টা থাকলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে হামলা, বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
হামাস শাসিত গাজার বাসিন্দারা বলেছেন, রাতারাতি বিমান হামলা এখনও পর্যন্ত তীব্র মাত্রায় অব্যাহত আছে। ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ প্রায় নিশ্চিত। দিনভর বোমা হামলা চলেছে এবং অনেক ভবন ধসে গেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক লোক আটকা পড়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলার একাধিক সতর্কতা জারি করেছে।
ছিটমহলটিতে সহায়তা পাঠানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। ইসরায়েলের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়ানক হামলার ঘটনা। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি এবং ইসরায়েল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহুর্তে এই ধরনের কোন প্রচেষ্টা চলছে না। পরিবর্তন কিছু হলে আমরা জনসাধারণকে জাবাব। আমরা হামাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তারাই এই আক্রমণ চালিয়েছে।’
হামলার পরপরই গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। তারা গাজায় সামরিক প্রবেশ এবং হামাসকে যেকোনো উপায়ে ধ্বংস করার সংকল্প করেছে। কিন্তু সোমবার দক্ষিণ ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে রকেট হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজেছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
ইতোমধ্যেই সীমান্তে ইসরায়েলি সৈন্য ও ট্যাঙ্ক জড়ো হয়েছে। গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৭৫০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশ শিশু এবং আরও প্রায় ১০ হাজার জন আহত হয়েছে। পাশাপাশি ধারণা করা হচ্ছে নিখোঁজ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে আরও অন্তত এক হাজার মানুষ।
খাদ্য, জ্বালানি এবং জলের অভাবে গাজায় নিরাপদ বিতরণ এবং রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে কিছু বিদেশি নাগরিকদের সরানোর একটি চুক্তির জন্য মিসরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শত শত টন ত্রাণ সহায়তার গাড়ি আটকে রাখা হয়েছে।
এর আগে সোমবার মিসরীয় নিরাপত্তা বলেছিল, ছিটমহলে সাহায্যের অনুমতি দিতে সীমান্ত ক্রসিং খোলার চুক্তি হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিদেশিদের বের করে দেওয়ার বিনিময়ে গাজায় বর্তমানে কোনো যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার চুক্তি নেই।’
হামাসের কর্মকর্তারাও সীমান্ত ক্রসিং খোলা বা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো সত্যতা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন।
তবে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি সোমবার বলেছেন রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খোলা নিয়ে ইসরায়েল সরকারের পক্ষে কোনো সম্মতি পাইনি। তাদের বোমা হামলার কারণে ক্রসিংটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ক্রসিংয়ের সামনে জনতার ভিড় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় তার নাগরিকদের ক্রসিংয়ে যেতে বলেছিল। মার্কিন সরকারের হিসাব মতে গাজায় ফিলিস্তিনি-আমেরিকান নাগরিকের সংখ্যা আনুমানিক ৫ থেকে ৬ শত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলে সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন এবং হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলকে যুদ্ধের নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।