টানা পাঁচদিন ধরে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অবরোধের মধ্যে থাকার পর গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমে মরিয়া হয়ে উঠছে।
উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার আহত রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়¸ গতকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) রাতে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২০০ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে। এর জবাবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
গতকাল বুধবার জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে গাজার লাখো বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছেন। গাজার বেশির ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ইসরায়েল থেকে। তবে হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। তবে গাজার বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এক নারী বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে বহু বছর যাবত আমরা বিদ্যুৎ যাওয়া আসার সমস্যায় রয়েছি।’
হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ ছাড়াও খাদ্য এবং পানিসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশাধিকার দরকার। গাজা উপত্যকায় ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহের জন্য নিরাপদ করিডর দেয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে গাজা ত্যাগের করিডোর দেওয়ারও দাবি উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে আলোচনা শুরু করেছে। জাতিসংঘ ও মিশর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ এবং বাসিন্দাদের নিরাপদে গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় অন্তত ৩ লাখ ৩৮ হাজার বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েল গাজা সীমান্তে সেনা জড়ো করেছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত সৈন্যের পাশাপাশি ৩ লাখের মতো সংরক্ষিত সৈন্য রয়েছে। তবে গাজার অভ্যন্তরে কখন তারা অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
রাজনৈতিক বৈরিতা সরিয়ে রেখে বিরোধী নেতা বেনি গাৎজকে সাথে নিয়ে বুধবার তিনি যুদ্ধকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন ‘প্রতিটি হামাস সদস্য এখন একজন মৃত মানুষ’। অন্যদিকে গাৎজ বলেন, ‘এখন যুদ্ধের সময় ও নতুন সরকার পৃথিবী থেকে হামাস নামের সবকিছু সরিয়ে দিতে প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরোধী দলগুলো পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে যাবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার টেলিফোনে ইসরাইল-গাজা সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেন।’ তেহরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ খবর প্রচার করা হয়েছে।
দুই বছর আগে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরুর পর এই প্রথম এই ধরনের টেলিফোন আলাপের কথা জানা গেল প্রকাশ্যে। ইরানের গণমাধ্যম বলন, প্রেসিডেন্ট রাইসি ও যুবরাজ মোহাম্মদ ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলেছে, সৌদি যুবরাজ নিশ্চিত করেছেন যে, ‘বর্তমান উত্তেজনা নিরসন করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব পক্ষের সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ করছে সৌদি আরব’।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি বর্তমান সংঘাতের অবসানের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তবে ব্লিঙ্কেন কোনো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি।
ব্লিঙ্কেনের স্পষ্ট বার্তা- যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে সেটা আজ, আগামীকাল ও ভবিষ্যতেও। হামাসের বিরুদ্ধে জোরদার ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে যাবে। তবে সেই সঙ্গে যুদ্ধে নিয়মকানুন রক্ষা ও বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইসরায়েলকে তাগিদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের যে নাগরিকদের হামাস জিম্মি করে রেখেছে, তাদরে মুক্তির বিষয়টিও ব্লিঙ্কেনের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। খবর রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন নাগরিক হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে। তবে কীভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে দাবি করেছিলেন যে তিনি হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা শিশুদের শিরোচ্ছেদ করছে এমন ছবি দেখেছেন এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউজ। তারা জানিয়েছে, বাইডেন আসলে এ ধরনের কোন ছবি দেখেননি।