আমির খানের বিপরীতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় পরিচিতি। অভিনয়ের পাশাপাশি সঙ্গীতজগতেও জনপ্রিয় তিনি। কখনও সহ-অভিনেত্রীর প্রেমে পড়েছেন, তো কখনও বহুকামিতা নিয়ে সরব হয়েছেন। লোকচক্ষুর আড়ালে বিয়ে করে তা গোপনও রেখেছিলেন। এখন কী করেন বলিপাড়ার অভিনেত্রী মণিকা ডোগরা?
১৯৮২ সালের ২৫ অক্টোবর আমেরিকার মেরিল্যান্ডে জন্ম মণিকার। আমেরিকায় স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। সঙ্গীত এবং অভিনয় দুইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় মিউজিক থিয়েটার নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
আমেরিকায় কলেজে পড়াকালীন একটি পানশালায় কাজ করতেন মণিকা। হাতখরচের জন্যই তিনি কাজ করতেন সেখানে। ২০০৫ সালে আমেরিকায় একটি রক ব্যান্ড খোলেন তিনি। সেই ব্যান্ডে গিটারবাদক ছিলেন র্যানডল্ফ কোরেয়া।
কানাঘুষো শোনা যায়, র্যানডল্ফের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মণিকা। কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৭ সালে প্রথম তাঁদের ব্যান্ডের গানের অ্যালবাম মুক্তি পায়। তার পর আরও গানের অ্যালবামে গাইতে দেখা গিয়েছে মণিকাকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে মণিকা জানিয়েছিলেন যে, তাঁর মামা ডোগরি লোকগানের শিল্পী ছিলেন। সেখান থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। ইংরেজি গানের পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও গান গেয়েছেন মণিকা।
২০১০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ব্রেক কে বাদ’ নামের রোম্যান্টিক ঘরানার একটি হিন্দি ছবি। দীপিকা পাড়ুকোন এবং ইমরান খান অভিনীত এই ছবিতে একটি গান গেয়েছেন মণিকা।
২০১৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ইনকার’ নামের রোম্যান্টিক থ্রিলার ঘরানার একটি ছবি। অর্জুন রামপাল এবং চিত্রাঙ্গদা সিংহ এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে ইংরেজি ভাষায় একটি গান গেয়েছিলেন মণিকা।
গান গাওয়ার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতেও দেখা গিয়েছে মণিকাকে। ২০০৮ সালে ফারহান আখতার প্রযোজিত ‘রক অন!’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তবে পর্দায় সীমিত সময়ের জন্য দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
২০১১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ধোবি ঘাট’। এই ছবির মাধ্যমেই পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় বলি অভিনেতা আমির খানের প্রাক্তন স্ত্রী কিরণ রাওয়ের। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয় মণিকাকে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘ধোবি ঘাট’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মণিকা। কিন্তু পরে কিরণের প্রস্তাবে রাজি হন তিনি। ‘ধোবি ঘাট’ ছবিতে আমিরের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ছবিমুক্তির পর অভিনয় দক্ষতার কারণে দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়োন মণিকা।
‘ধোবি ঘাট’ মুক্তির পর ‘ডেভিড’, ‘ফায়ারফ্লাইস’, ‘তেরা সুরুর’-এর মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন মণিকা। ‘রিল্যাপ্স’ নামের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটির পর্দাতেও আত্মপ্রকাশ করেন মণিকা। ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হোয়াট আর দ্য অড্স’ নামের ছবিতেও দেখা যায় মণিকাকে।
সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে গানের আন্তর্জাতিক রিয়্যালিটি শোয়ের অনুষ্ঠানে বিচারকের আসনে দেখা গিয়েছে মণিকাকে। এমনকি গানের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেন তিনি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, বলি অভিনেতা অনিল কপূরের পুত্র হর্ষবর্ধন কপূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান মণিকা। কিন্তু কোনও অজানা কারণে সেই সম্পর্কে ইতি টানেন দুই তারকা।
দীর্ঘ দিন বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকার পর সকলের আড়ালে বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন মণিকা। কিন্তু সে বিয়েও টেকেনি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে অজানা তথ্য জানিয়েছিলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে মণিকা বলেছিলেন, ‘‘আমি আমার বিয়ের কথা গোপন করেছিলাম। আমি ভাগ্যবতী, কারণ সঙ্গী হিসাবে আমি যাকে পেয়েছিলাম সে খুবই ভাল মানুষ। বিবাহিত থাকাকালীন আমি এক সহ-অভিনেত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। নিজের এই আকস্মিক পরিবর্তন নিয়ে ধন্দে ছিলাম আমি। কিন্তু ওকে সব কিছু জানিয়েছিলাম। ও সব শুনে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়েই বিচ্ছেদের পথ বেছে নিই।’’
মণিকা নিজেকে বহুকামী (প্যানসেক্সুয়াল) বলে পরিচয় দেন। অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে আমি নিজেকে নিয়ে লজ্জা পেতাম। মনে হত আমার স্তনগুলোই যেন আমার পরাধীনতার কারণ। বার বার হেনস্থার শিকার হয়েছিলাম আমি। কাকে, কী ভাবে চাই তা বুঝতে পারতাম না।’’
অতীতের এক অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মণিকা বলেছিলেন, ‘‘বহু বছর আগে একটি পার্টিতে গিয়েছিলাম। মত্ত অবস্থায় ছিলাম আমি। সেখানে এমন এক জনকে চুমু খেয়েছিলাম যিনি আদতে নারী, কিন্তু নিজেকে পুরুষ হিসাবে উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রেমেও পড়েছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম আমি উভকামী। তার পর বহুকামিতা সম্পর্কে অবগত হলাম। তখন যেন নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে খুঁজে পেলাম আমি।’’
মণিকা যে বহুকামী, তা প্রকাশ্যে আনতেই কটাক্ষের শিকার হন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেকেই আমার পাশে দাঁড়াননি। অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। বাড়ি ছেড়ে বেরোতামও না আমি। এক বছর খুব খারাপ কাটিয়েছি।’’
বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলসে রয়েছেন মণিকা। গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। ২০২২ সাল থেকে ফ্রান্সের এক সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন মণিকা। কিন্তু বিয়ে নিয়ে এখনও কোনও চিন্তাভাবনা করেননি তিনি।
ভিক্টোরিয়েন মুলিয়েজ নামে ফ্রান্সের এক ডিস্কো জকির সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন মণিকা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ক্যালিফর্নিয়ার একটি কনসার্টে গিয়ে এক জন বন্ধুর মারফত ভিক্টোরিয়েনের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করেন তাঁর প্রেমিক।
২০২১ সালে ‘দ্য ম্যারেড উওম্যান’ নামের ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন মণিকা। এই সিরিজে অভিনেত্রী ঋধি ডোগরার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করে কটাক্ষের শিকার হন মণিকা।
‘কার্টেল’ নামের একটি ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেন মণিকা। ২০২৩ সালে ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাস, বহু অওর ফ্লেমিঙ্গো’ ওয়েব সিরিজে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় মণিকাকে।