আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নেই কোনো নির্বাচনী আমেজ। বিএনপির অফিসগুলোতে ঝুলছে তালা। গ্রেপ্তার আতংকে সাবেক এমপি মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীসহ পলাতক রয়েছে বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মী।
হরতাল-অবরোধ ও নাশকতার মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিনা কারনে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের তাদের বাসাবাড়ি তল্লাসীর নামে হয়রানি করছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিনা কারনে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। এছাড়া, হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা ঠেকাতে তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
আজ সোমবার (২০ নভেম্বর) মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে থানা, পৌরসভাসহ ১৪ ইউনিয়নের বিএনপির অফিসে ঝুলছে তালা। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
কাউন্সিলর আলী আজমা সিদ্দিকীসহ বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, মির্জাপুরে আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা অন্য কোন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক কোন হানাহানি বা সহিংসতা নেই। তবু্ও মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। আর এই গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। থানা বিএনপির অফসিসহ ১৪ ইউনিয়নের বিএনপির অফিসে ঝুলছে তালা।
অপর দিকে মির্জাপুর থানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, থানায় মামলা এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতা অভিযোগ করেন, বিনা কারনে পুলিশ তাদের হয়রানি করে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠাচ্ছেন। এছাড়া পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্ম গোপনে রয়েছেন সাবেক এমপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. আব্দুর রউফ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সালাউদ্দন আরিফ, সাবেক চেয়ারম্যান আলী এজাজ খান চৌধুরী রুবেল, জামুর্কি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ডি এ মতিন, পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ভিপি মো. হযরত আলী মিঞাসহ মির্জাপুর পৌরসভা এবং ১৪ ইউনিয়নের বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মী।
এছাড়া টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল, সখীপুর, কালিহাতী, ভুয়াপুর, গোপালপুর, ঘাটাইল, মধূপুর, ধনবাড়ি উপজেলায়ও একই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাব বলেন, ‘মির্জাপুরে বিএনপি অত্যান্ত সুসংগঠিত রয়েছে। সরকার দলীয় নেতাকদের যোগসাজসে পুলিশ বিনা কারনে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।’
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘গত ৩০ অক্টোবর গোপন সংবাদের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন হরতাল-অবরোধ সফল করতে গোড়াইল এলাকায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর বাসভবনে বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্য জরুরী মিটিং করছেন। নাশকতা ঠেকাতে এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন তাদের গ্রেপ্তার করতে গেলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর এ পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ বিনা কারনে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না বলে দাবী করেন তিনি।