জ্বালানি সাশ্রয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে রাজধানীসহ দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং। সরকারের পক্ষ থেকে দিনে এক ঘণ্টা লোড শেডিং করার কথা থাকলেও বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় রাজধানীতে দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা এবং বিভিন্ন বিভাগীয় জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। অতিরিক্ত লোড শেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ভাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।
এতে আপৎকালীন বিকল্প হিসেবে সচ্ছল মানুষের মধ্যে অনেকেই এখন বাসায় ব্যবহারের জন্য কিনছে আইপিএস এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কিনছে জেনারেটর। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক মাস আগে আইপিএস ও জেনারেটরের চাহিদা তেমন না থাকলেও এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের কারণে ১০ দিন ধরে এসব পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। অনেকে কেনার জন্য দোকানে এসে দরদাম জেনে যাচ্ছে। বাজারে এখন জেনারেটরের চেয়ে আইপিএসের চাহিদা বেশি।
কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকায় আইপিএস ও জেনারেটরের বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। যারা একসময় আইপিএস ব্যবহার করত, তারাও এক পর্যায়ে পুরনো আইপিএস বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আবার লোড শেডিং শুরু হওয়ায় ক্রেতারা আইপিএস কিনতে ইলেকট্রিক দোকানে যাচ্ছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশেই আইপিএস, জেনারেটর ও ব্যাটারি বিক্রিয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘আইপিএস বাজার’। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মো. আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইপিএস ও জেনারেটরের বাজারটি গত কয়েক বছর থমকে ছিল। দেশে আবার লোড শেডিং শুরু হওয়ায় এসব পণ্যের বিক্রি বাড়ছে। নতুন আইপিএস কেনার পাশাপাশি ব্যাটারির চাহিদাও বেড়েছে। যাদের বাসায় পুরনো আইপিএস রয়েছে, তারা এখন ব্যাটারি কিনছেন। যার কারণে বাজারে ব্যাটারির চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনকারী কম্পানিগুলোও এখন ব্যাটারি দিতে পারছে না। ’
গত দুই সপ্তাহে আইপিএসের বিক্রি তুলনামূলক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান রাজধানীর মধ্য বাড্ডার জেকে ইলেকট্রনিকস দোকানের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম সেলিম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকে আইপিএসের দাম জানতে আসছেন। পছন্দ হলে অনেকে কিনেও নিচ্ছেন। লোডশেডিং চলমান থাকলে কিছুদিন পর আইপিএস বিক্রি আরো বাড়তে পারে। ’
আমিনুল ইসলাম সেলিম আরো বলেন, ‘এখন বাজারে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকার মধ্যে দুই লাইট ও দুই সিলিং ফ্যানের আইপিএস পাওয়া যাচ্ছে। চারটি লাইট ও চারটি ফ্যানের আইপিএস ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ’ এ দুটি মডেলের আইপিএস এখন বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বাড্ডার সিঙ্গার শোরুমে আইপিএস বিক্রির বিষয়ে জানতে গেলে ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার মো. রাশেদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের আইপিএসের এখন প্রচুর চাহিদা। আমাদের কাছে যত আইপিএস ছিল এরই মধ্যে সব বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতারা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আমরা মূলত ৩১ হাজার টাকার একটি মডেলের আইপিএস বিক্রি করে থাকি। জেনারেটরও এখন আর নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আইপিএস। এর মধ্যে অন্যতম লুমিনাস ও মাইক্রোটেক। এর পরেই রয়েছে লিভগার্ড, এমাজি, ইউটিএল ডামা প্লাস, এক্সাইডের মতো কিছু প্রতিষ্ঠানের পণ্য। দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের আইপিএসও বেশ ভালো বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের আইপিএসের দাম বিদেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেক কম।
রাজধানীর ইসলামপুরের পাটুয়াটুলী পাওয়ার লিনেক্স ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব শোরুমের পাশাপাশি অনলাইনেও আইপিএস ও জেনারেটর বিক্রি করছে। জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী কামরুল শেখ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লোড শেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। ঢাকার বাইরে থেকে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা আইপিএস নিতে দোকানে আসছেন। স্বাভাবিক সময়ে দিনে এক-দুটি আইপিএস বিক্রি হতো। এখন চাহিদা বাড়ায় দিনে চার-পাঁচটা আইপিএস বিক্রি হচ্ছে। দুই লাইট ও দুই ফ্যানের ভালো ব্র্যান্ডের একটি আইপিএস ২২ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে এবং ১০ লাইট ও পাঁচ ফ্যানের আইপিএস ৩০-৩৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘এসব আইপিএসের সঙ্গে এখন সোলার আইপিএসও বিক্রি হচ্ছে। ৮০০ ওয়ার্ডের একটি সোলার আইপিএস দিয়ে ফ্রিজ, মোটরসহ সব কিছু চালানো সম্ভব। দাম পড়বে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। রাজধানীর উচ্চবিত্ত অনেক পরিবার জেনারেটর বাদ দিয়ে এই সোলার আইপিএস কিনছেন। এটি শুধু লোডশেডিংয়ের জন্য নয়, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করার জন্য কিনছেন গ্রাহকরা। এতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ খরচ কমে যাচ্ছে। ’
বাজারে আইপিএস কিনতে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, লোড শেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে বাজারে আইপিএস, চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইটের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে বিক্রেতারাও এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। অনেক ব্যবসায়ী যে আইপিএস আগে ২০ হাজার টাকায় কেনা যেত, বাজারে ব্যাটারি সংকটের কথা বলে সেটি বিক্রি করছে ২২ হাজার টাকায়।