টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় ২২ ধারায় ওই নারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতের সেই লোমহর্ষক ঘটনা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই নারী বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠে ঢাকা যাচ্ছিলাম। সিরাজগঞ্জের তিনটি আলাদা জায়গা থেকে ১০ জনের ডাকাত দল বাসে ওঠে। ডাকাতি শুরুর আগে আমার পাশের খালি সিটে ডাকাতদের একজন বসতে চাইলে তাকে আমি বসতে দিইনি। ডাকাতি শুরু করলে আমি তাদের বাঁধা দিয়েছিলাম। এ কারণে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়’।
‘বাস চালকের কাছে গিয়ে তিনজন ডাকাত প্রথমে তাকে জিম্মি করে। চালকের গলায় ছুরি চেপে ধরে সিট থেকে উঠতে বলে। একপর্যায়ে তারা চালককে বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা আমার পাশের সিটে বসা হেলপারকে তুলে নেয়। আমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তারা আমার হাত-মুখ-চোখ বেঁধে ফেলে এবং …’।
তিনি আরো বলেন, ‘ডাকাতরা যার কাছে টাকা বেশি পেয়েছে তাকে কিছু বলেনি। সবার কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কারসহ সব কিছু লুটে নেয়। একজন মহিলা তার স্বামীকে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন, তার কাছ থেকে সব টাকাও তারা কেড়ে নেয়’।
জবানবন্দিতে ওই নারী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘ঘটনার সঠিক বিচার না হলে আজ এক নারীর সঙ্গে যা ঘটেছে কাল আরেক নারীর সঙ্গেও তা ঘটবে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। যাতে ওদের দেখে অন্যরা ভালো হয়ে যায়’।
গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ২৪ যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে একদল ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে ওঠে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের বেঁধে ফেলে ডাকত দল। এ সময় দলটি বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়। একপর্যায়ে তারা বাসযাত্রী এক নারীকে ধর্ষণ করে। বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির স্তুপে বাসটি ফেলে পালিয়ে যায়।