একমাস সাত দিন পর শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম বিসিবি’র ভেন্যুর মর্যাদা ফিরে পাওয়ার পর মাঠের পরিচর্যায় নেমেছেন কর্মীরা। একই সঙ্গে একমাসে অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকা ড্রেসিংরুমসহ আনুষাঙ্গিক পরিচ্ছন্নতাতেও হাত দেওয়া হয়েছে। রোববার (৯ এপ্রিল) রাতে আসা কার্গো ট্রাকে নিয়ে যাওয়া মালামাল বগুড়া স্টেডিয়ামে পৌঁছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) ভোরে শহীদ চান্দু ষ্টেডিয়াম থেকে ৩১টি এসিসহ অন্যান্য মালামাল নামানো হয়। সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে মাঠের ঘাসকাটা ও পানি ছিটানো।
শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল জানান, ঢাকা থেকে আসা তিনটি কাভার্ড ভ্যান বোঝাই মালামাল রাতে পৌঁছলেও সোমবার সকাল থেকে তা নামানো হয়। ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সকল মালামাল আবারও ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। স্টেডিয়াম থেকে ৩১ টি এসিসহ যা যা নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তা আবার ফেরত এসেছে। ১৭ জন স্টাফের মধ্যে একজন বাদে বাকি সবাই আবার যোগদান করেছেন।
জামিল আরও জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে মাঠের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এই কয়েকদিনে মাঠের অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি না দেওয়ার কারণে এমন হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার। তবে এখানে যেহেতু প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্রিকেট লিগের খেলা চলছে তাই আগামী ১৩ মার্চ তারিখের আগে মাঠ সংস্কারের সম্পূর্ণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেডিয়ামের মূল দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা জানান, ঈদের পর বিসিবির পক্ষ থেকে এখানে একটি টিম পরিদর্শনে আসবেন। তারা পরিদর্শন শেষে স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা দেখবেন।
এদিকে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম বিসিবি’র ভেন্যু হিসেবে বহাল হওয়ার সংবাদে ক্রীড়ামোদী বগুড়াবাসীর মনে স্বস্তি ফিরেছে। আগামী দিনে এই মাঠে আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে এই আশা করছেন। ভেন্যু ফিরে এসেছে এই সংবাদ ফিরে পাওয়ার পর রবিবার থেকে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ স্টেডিয়ামে যান। তারা স্টেডিয়ামের মাটিতে পা ফেলে স্বস্তি প্রকাশ করেন। এসব উচ্ছ্বসিত মানুষ বগুড়ায় আন্তর্জাতিক খেলার জন্য বগুড়া বিমান বন্দর চালুর দাবি জানান।
সোমবার সকালে স্টেডিয়ামে মালামাল নামার ঘটনা দেখতে স্টেডিয়ামের পাশের এলাকা শহরের মালগ্রাম এলাকার বিপ্লব জানান, যে দিন মালামাল নিয়ে যাওয়া হয় তার পর দিন মানববন্ধন করেছিলাম। ভেন্যু ফিরে পাওয়ার সংবাদে ভালো লাগছে। তাই মাঠে এসেছি দেখতে। মাঠে এসেই শান্তি পেলাম। বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ভেন্যু ফিরে পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে দর্শকের কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠুক।
বগুড়ার, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ আব্দুর রহিম বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ভেন্যু পূনর্বহালের খবরে উল্লাসিত। তিনি বলেন, এ খুশি ক্রিকেট প্রিয় মানুষ শুধু খুশি নয়, এটা মহাখুশি। ক্রিকেট ভেন্যু পূনর্বহালের জোরালো দাবি নিয়ে যারা আন্দোলন করেছেন তারা এখন গর্বের সঙ্গে বলতে পারবেন তাদের আন্দোলন বৃথা যায়নি।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিসিবির বিরোধের জের ধরে গত ২২ মার্চ শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়ে এই মাঠ থেকে তাদের ভেন্যুর মর্যাদা প্রত্যাহার করার কথা জানিয়ে দেয় এবং এখান থেকে মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় সরঞ্জামসহ তাদের সব কিছু একদিনের মধ্যেই নিয়ে যায়। এমনকি এখানে বিসিবি’র যে ১৭জন জনবল ছিল তাদেরকেও তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিসিবি’র ভেন্যু ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। গত শনিবার জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বিসিবির বৈঠকের পর ভেন্যু ফিরে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এই স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। পরে সেটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতি পায়। তবে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের পর ওই ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক আর কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিবর্তে জাতীয় লীগের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়।