টাইফুন ডোকসুরির অবশিষ্টাংশের প্রভাবে রেকর্ড বৃষ্টির পর বন্যা দেখা দেওয়ায় বেইজিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ঝুঝৌতে উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। ৬ লাখেরও বেশি বাসিন্দার শহরটির তলিয়ে যাওয়া বিশাল অংশ থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নিতে বুধবার কয়েক হাজার উদ্ধারকর্মীকে সেখানে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে চীনের উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে খারাপ ঝড়ের কবলে পড়েছে হেবেই প্রদেশের এই নগরী। এই ঝড়ে চীনে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝুঝৌয়ের পাশেই চীনের রাজধানী বেইজিং। এখানে শনিবার থেকে বুধবার সকালের মধ্যে ১৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এতে নগরীর বহু এলাকা পানির নিচে।
শনিবার থেকে হেবেইতে গড়ে ৩৫৫ মিলিমিটার (১৪ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হওয়ার পর প্রদেশটির কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ঝুঝৌয়ের ১ লাখ ৩৪ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা এখন বন্যাকবলিত। ইতিমধ্যে নগরীর ছয় ভাগের এক ভাগ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হেবেই থেকে বন্যার পানি নদীগুলোর নিম্নপ্রবাহের দিকে নামতে শুরু করেছে। এতে কয়েকটি নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ঝুঝৌ নগরী প্রদেশটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর যে আবাসিক এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে আছে আয়তনে তা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের দ্বিগুণ বলে জানা গেছে। এখানে প্রায় ৬৫০ হেক্টর কৃষিজমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় জননিরাপত্তা ব্যুরো জানিয়েছে, নগরীটি পান ও ব্যবহারযোগ্য পানির স্বল্পতা এবং আংশিক বিদ্যুিবভ্রাটেরও মুখোমুখি হয়েছে। নগরীটির বন্যাকবলিত বাসিন্দাদের জন্য ভেলা, লাইফ জ্যাকেট ও জরুরি সরবরাহ দরকার বলে জানিয়েছে তারা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বন্যার পানি কোথাও কোথাও ৪ মিটার (১৩ ফুট) উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝুঝৌতে প্রায় ৯ হাজার উদ্ধারকারীকে পাঠানো হয়েছে, প্রতিবেশী হেনান ও শানসি প্রদেশ থেকে আরো উদ্ধারকারী টিম পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার তোলা এক স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, বন্যার পানি তিন দিক থেকে ঝুঝৌকে ঘিরে রেখেছে। গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্র জানিয়েছে, বেইজিং থেকে বিপুল পরিমাণ পানি ঝুঝৌকে ঘিরে থাকা তিনটি নদী বেয়ে নেমে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝুঝৌয়ের অনেক বাসিন্দা উদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। চীনের জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগ ইউবোতে এক ব্যবহারকারী বলেছেন, বেইজিং থেকে ছেড়ে দেওয়া বন্যার পানি আমাদের এখানে আসছে। তাই তাদের উচিত আমাদের উদ্ধারকারী ও উপকরণ পাঠানো। কিন্তু কিছুই পাঠানো হচ্ছে না।