দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এখনও ২৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বুধবার (০৮ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, হাজার হাজার লোককে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আরও ভূমিধসের হুমকি রয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, সোমবার ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি সিচুয়ান প্রদেশের কাংডিং শহরের প্রায় ৪৩ কিলোমিটার (২৬ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে ১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে।
চীনের রাষ্ট্র-চালিত পিপলস ডেইলি জানিয়েছে, সিচুয়ানের ইয়ান শহরেই মারা গেছে ৩৪ জন এবং প্রতিবেশী গাঞ্জি প্রিফেকচারে নিহত হয়েছেন ৪০ জন। এছাড়া এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ২৬ জন।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভি জানিয়েছে, ভূমিধস বা ভবন ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ২১ হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উদ্ধারকারীরা এখনও দেশটির পার্বত্য দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সেখানে কয়েক ডজন লোক আটকা পড়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে একটি মক্সি শহরের একটি ধসে পড়া হোটেলের নীচে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকা এক নারী রাষ্ট্র-পরিচালিত রেড স্টার নিউজ বলেন, দুটি কলামের মধ্যে আমার মাথা আটকে ছিল এবং আমার পা দুই টেবিলের মাঝে আটকে ছিল।
সে সময়ও তিনি তার বাচ্চাদের জন্য চিন্তিত ছিলেন এবং তাদের স্কুল ভবনটিও ভেঙে পড়েছে কিনা- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ওই নারী আরও বলেন, আমি নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং শুধুমাত্র একটা অবস্থানেই পড়ে ছিলাম। আমি জানি না, কে আমাকে বাঁচিয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, আমি কেবল এটা ভাবতে পারি যে, বাচ্চারা তাদের মায়ের জন্য কাঁদছে কিনা।
এদিকে, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভি সম্প্রচারিত একটি নাটকীয় ফুটেজে দেখা গেছে যে, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা ঘুম থেকে উঠছেন এবং শিশুদেরও ঘুম থেকে ওঠাচ্ছেন আর ভূমিকম্প আঘাত হানতেই তাদেরকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন।
শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে প্রাদেশিক রাজধানী চেংডু ও চংকিং এর নিকটবর্তী মেগাসিটির ভবনগুলো রীতিমত কেঁপে ওঠে- যেখানে লক্ষ লক্ষ লোক কঠোর কোভিড-১৯ লকডাউনের অধীনে তাদের বাড়িতে বন্দী ছিলেন। সেখানকার বাসিন্দারা এএফপিকে এমনটাই জানিয়েছেন।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা পর্যন্ত ৩.০ এবং তার বেশি মাত্রার অন্তত ১৩টি আফটারশক শনাক্ত করা হয়।
প্রাদেশিক গ্রিড অপারেটর বলেছে যে, ভূমিকম্পের কারণে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন অংশজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে ২২ হাজারেরও বেশি পরিবারে বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেয়া হয়েছে এবং ইয়ানের ১২টি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রকে অস্থায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
তবে চীনের আবহাওয়া প্রশাসন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত” হবে এবং ভূমিধসের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতে পারে।