চৈতি রায়কে (১৮) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে- পরিবার দাবি করলেও অদৃশ্য কারণে তা মানতে নারাজ পুলিশ। মামলা করার জন্য বারবার থানায় গেলেও স্বজনদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, কাগজে এটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হিসেবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দিয়েছে পুলিশ। বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবারটি।
পুলিশ ও চৈতির স্বজনরা জানান, গত বছর ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের বাসা থেকে স্বামী লিটন দত্ত স্বজনদের সহায়তায় অচেতন অবস্থায় চৈতিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করেন লিটন। কিন্তু শুরু থেকেই চৈতির পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের টাকা না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করে আত্মহত্যার প্রচার চালানো হচ্ছে।
চৈতির মা আলো রায় বলেন, নিজেদের ইচ্ছায় চৈতি ও লিটন বিয়ে করেছিল। তাদের তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু লিটনের পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি এবং শুরু থেকেই নির্যাতন করে আসছে। তারা বলত, লিটনকে অন্যত্র বিয়ে করালে ২০ লাখ টাকা যৌতুক পেত। সেই পরিমাণ টাকা পেতে আমাদের ওপর চাপ দেওয়া হয়। টাকা না পেয়ে মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তারা।
তিনি বলেন, মেয়ের মৃত্যুর পর আমি কোতোয়ালি থানায় লিটন দত্ত, তার মামা বাদল নন্দী, মামি অঞ্জনা নন্দী ও মামাতো বোন প্রিয়াঙ্কা নন্দীকে আসামি করে হত্যা মামলা করতে চাই। কিন্তু পুলিশ তা না নিয়ে জোর করে আত্মহত্যা মামলা নিয়ে লাশ দাহের ব্যবস্থা করে। এর পর গত ১০ মাসে বারবার থানায় গেলেও তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওসির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও পারিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও পাত্তা দেননি। বকাঝকা করে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর পর আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত করলেও দরিদ্র বলে বিচার পাচ্ছি না।
আলো রায়ের দাবি, লিটনরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে হত্যাটি ধামাচাপা দিচ্ছে। এখন আসামিরা এলাকায় বলাবলি করছে, টাকা হলে সব কিছুই সম্ভব। এখন হাসপাতাল ম্যানেজ করে এটিকে আত্মহত্যা বানাতে পারে বলে শঙ্কা তাঁর।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নুসরাত জাহান নূপুর (বর্তমানে কামরাঙ্গীরচর থানায় কর্মরত) বলেন, চৈতির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ফাঁসনিয়ে মৃত্যু উল্লেখ করা হয়েছে। আমিও এটি ফাঁস নাকি অন্য কিছু, তা তদন্ত করছি। গত মে মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চৈতির পরিবারের অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ, থানায় আমি ছাড়াও পুলিশের কর্মকর্তারা থাকেন। কখনোই পরিবারটির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি।
কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, চৈতির পরিবারই তো অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছিল। তাঁরা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করলে তো সেভাবেই তদন্ত হতো। তা ছাড়া মামলার তদন্তেও আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন কেন তাঁরা অভিযোগ করছেন, তা বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে কারও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। তদন্তে যা পাওয়া গেছে, আদালতে তাই জানানো হয়েছে। এখন চৈতির পরিবার চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।