বাঙালির অস্থিত্বে মিশে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র বোদ্ধাদের সারগর্ভ আলোচনাগুলোতে এটি শোনা গেলেও ব্যাতিক্রমী একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে আয়োজকদের এমন মননের পরিচয়ই পাওয়া গেলো লন্ডনে।
গেল রোববার রবিবার ৪মে বিকেলে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে স্বদেশবিদেশ সম্পাদক সাংবাদিক বাতিরুল হক সরদার ও সংস্কৃতিকর্মী কলামিষ্ট শাহ রুমি হক দম্পতির লন্ডনের বাড়ীতে আয়োজিত এক রবীন্দ্র আড্ডায় উপস্থিত আড্ডাবাজদের চেহারার অভিব্যক্তিই জানান দিলো যে আসলেই রবীন্দ্রনাথ মিশে আছেন বাঙালির অস্থিত্বে।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শ্যামল চৌধুরীর সাবলিল তত্বাবধান ও উপস্থাপনায় তিনজন শিল্পী মিতালী বানোয়ারী, সুনিতা চৌধুরী ও রুমি হক যখন একে একে পরিবেশন করছিলেন রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা। তখন মনে হচ্ছিল শুধু গান ও সংস্কৃতি জগতের বড় বড় মঞ্চ নয়, প্রতিটি বাঙ্গারীর ঘরের গৃহকোণেও যেন রবীন্দ্রনাথের অবস্থান। পুরো বিকেল জুড়েই যেন ছিলো রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি। উপস্থাপক শিল্পী শ্যামল চৌধুরী নিজেও তুলেছিলেন সুরের ঝংকার।
শিল্পীদের রবীন্দ্র ঝংকার শুনে উপস্থিত আড্ডাবাজ একজনের অভিমানী রসাত্মক মন্তব্য ছিলো শ্যামল কান্তি দাসদের গান গাওয়ার প্রতিভা দিলেন, কিন্তু আমাদের অনেককেই তা দিলেন না। আমাদের প্রতি সৃষ্টিকর্তা এই বৈষম্য না করলেও পারতেন’।অনুষ্ঠানে মিতালী, সুনিতা ও রুমি ছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পী শর্মিলা দাশ ও মোস্তফা কামাল মিলন। তবলায় ছিলেন গ্রীনিচ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী তবলাবাদক পন্ডিত সুদর্শন দাশ।
রবীন্দ্র আড্ডায় সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা। অপরিচিত একজনের গাড়ীতে রবীন্দ্র সুর শুনে আরেকজন মানুষ কিভাবে ঐ এলাকায় বাড়ী কিনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জীবন খাতার এমন একটি টুকরো স্মৃতি তুলে ধরে সৈয়দ পাশা বলেন, বাঙ্গালীর সুখ দুঃখ, হাসি কান্না সবকিছুতেই মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ। বিভিন্ন ক্রান্তিকালেও আমাদের আশ্রয় এই মানুষটি। গৃহকোণ আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন রুবাইয়াত শারমিন ঝরা, মেসবাহ শহিদ, পাবক রঞ্জন দাশ, সাঈদা মিলন, বাতিরুল হক সরদার ও সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল।
অনুষ্ঠান শেষে ছিলো ভূরিভোজের আয়োজন। ভোজ আইটেমগুলোতেও ছিলো বাঙালিয়ানার ছড়াছড়ি। বেগুন ভর্তা, ইলিশ ভাজা, বোয়াল মাছ থেকে শুরু করে সেমাই, পায়েশ কি নেই তাতে।
গভীর রাতে অনুষ্ঠান আড্ডা শেষ হলে ‘আজ জোৎসনা রাতে সবাই গেছে বনে..’ যার যার কন্ঠে এমন গুন গুন সুর তুলে আড্ডাবাজরা সবাই যার যার বাড়ীর পথ ধরেন।