আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি। গত আগস্ট মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের পুরোপুরি দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার পর কাবুলে এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হামলা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে আল–কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর ১১ বছর পর তাঁর উত্তরসূরি জাওয়াহিরিকে এভাবে কে ‘বেচে দিল’, তা নিয়ে আফগানিস্তানে নতুন ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার এবং তাদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার তালেবাননিয়ন্ত্রিত কাবুলের একটি সুরক্ষিত বাড়ির ব্যালকনিতে যেই না আয়মান আল–জাওয়াহিরি পা রাখেন, ঠিক তখন ড্রোনের সহায়তায় দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সেখানে হামলা চালানো হয়। এ বছর শুরুর দিকে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে চলে যান তিনি। এর পর থেকে তিনি এ বাড়িতে সপরিবার থাকছিলেন।
কিছু বিশ্লেষক এমন ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুনজর ফেরত পেতে ও আইএমএফের সহায়তা প্যাকেজসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আল–কায়েদার প্রধান জাওয়াহিরিকে ‘উৎসর্গ’ করেছে পাকিস্তান। এটি ওয়াশিংটনের আর্থিক সহায়তা পেতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বাজওয়ার সাম্প্রতিক আহ্বানের দিকে ইশারা করে।
এ রকম বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় আফগান প্রতিরোধ বাহিনীর (তালেবানবিরোধী জোট) নেতা আমরুল্লা সালেহর কথাতেও। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ইতিহাসের একটা বড় সময়জুড়ে দেশটি আফগানিস্তানের হুমকি মোকাবিলা ও পশ্চিমা স্বার্থে কাজ করে তার অর্থনৈতিক সংকট প্রশমনের চেষ্টা চালিয়েছে।উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান। জাওয়াহিরি হত্যাকাণ্ড বিষয়ে এক টুইটে তিনি বলেন, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। এখন জাওয়াহিরিকে মেরে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। খুব সম্ভবত তারা তা করেছে পাকিস্তানের সহায়তায়। এ ঘটনায় বেশ কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি ঘটতে পারে।
তবে অপর কিছু বিশ্লেষক এ সতর্ক মত পোষণ করেন, এমন সম্ভাবনা অমূলক নয়, তালেবানেরই একটা অংশ জাওয়াহিরিকে ধরিয়ে দিয়েছে। এ অংশ পাকিস্তানের বিরোধী ও কাবুলে দেশটির কোনো প্রতিনিধি থাকারও বিরোধী। আফগানিস্তানে আল–কায়েদা ফিরে আসুক—তারা এটি চাচ্ছিল না।
পলাতক থাকা আল–কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি হক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের সহায়তায় কাবুলের ওই নিরাপদ বাড়িতে এসে ওঠেন বলে খবরে জানা যায়। এই নেটওয়ার্ককে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) একটি ভার্চ্যুয়াল শাখা বলে মনে করা হয়। এখন আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীনদের অংশ হয়ে উঠেছে হক্কানি নেটওয়ার্ক।
হক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হক্কানির ছেলে সিরাজুদ্দিন হক্কানি বর্তমানে তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তালেবানের বিভিন্ন ধারা–উপধারার মধ্যে বিবাদ রয়েছে বলে জানা যায়।
এক বিবৃতিতে তালেবান সরকার সম্ভব সর্বোচ্চ কঠোর ভাষায় কাবুলে রোববারের ড্রোন হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এটি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও দোহা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করে তারা।
তবে জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, দোহা চুক্তি অনুযায়ী নিজভূমি থেকে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে তৎপরতা চালাতে না দেওয়া ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কচ্ছেদ করার প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে তালেবান।
এই ধোঁয়াশা কেটে সব কিছু স্পষ্ট হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে ওয়াশিংটনের প্রাপ্তি, তারা আল-কায়েদার অবশিষ্ট জঙ্গিদের একজনকে নির্মূল করেছে। কিন্তু এ অঞ্চলে থাকা অবিশ্বাসের বিষবাষ্পকে নির্মূল করতে পারেনি।