২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে বাজেটপ্রণেতারা আভাস দিয়েছেন। বিশাল অঙ্কের এই বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার সরকারি যে লক্ষ্যের কথা প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে, তা কতটা পূরণ হবে সেটি সময়ই বলে দেবে।
বিশ্বের সব দেশেই ক্ষমতাসীন দল বার্ষিক আয়-ব্যয় ও আর্থিক পরিচালনসংক্রান্ত বিবরণী বা জাতীয় বাজেটকে তার পরিচালিত রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক হিসেবে প্রচার করে থাকে। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সমালোচকরা ঐ একই বাজেটকে দরিদ্রবিদ্বেষী আর জনগণের অর্থকড়ি নয়ছয়ের হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করে। পুঁজিতান্ত্রিক বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, রাষ্ট্রের পুঁজি নিয়ন্ত্রণের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এসব দলের কেউ বাজেটের ভালোমন্দ দিক খুঁজে দেখতে চায় না। উত্তরোত্তর অধিক পুঁজি অর্জনের স্বপ্নে বিভোর মানুষের দৃষ্টিতে বাজেট হচ্ছে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দলিল, সরকারের আয়ব্যয়ের হিসাব। আসলে বাজেট হচ্ছে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক দলিল, যার সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য থাকতে হয়। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজস্ব কৌশল ও কর্মপন্থাও থাকতে হয়। দেশের স্বার্থ ও কল্যাণ, জনস্বার্থ, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা, রাজনীতি, অবকাঠামো উন্নয়নও দৃশ্যমান থাকতে হয় সেই বাজেট দলিলে। বাংলাদেশের বাজেট কাঠামোগত বিন্যাসের নিরিখে নীতিগতভাবে সর্বজনীন কি না, সে প্রশ্ন করা এখন অবান্তর। কেননা রাষ্ট্রের চার মূলনীতি তথা গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতানির্ভর জাতীয় বাজেট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের ঘোষিত ১৯৭২ সালের পর আর কখনো হতে দেখা যায়নি। আমাদের জাতীয় বাজেট এখন কার্যত বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের অনুকূল। যে কারণে এখনকার সরকারি উন্নয়ন নীতিনির্ধারকরা বুক ফুলিয়েই বলে থাকেন, ‘উন্নয়ন হলে বৈষম্য হবেই।’ অথচ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (২)-এ স্পষ্টতই ঘোষণা করা হয়েছে—মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
১ মে ১৯৭২ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দেশ আজ স্বাধীন। সম্পদের মালিক জনগণ। তাই কোনো শ্রেণিবিশেষের ভোগ-লালসার জন্য এবং লোভ চরিতার্থ করার নিমিত্তে এই সম্পদকে অপচয় করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সমাজতন্ত্র কায়েম করা।’ অথচ ৫০ বছর পরে এসে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসায়বান্ধব অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী নিজের স্বীকারোক্তিতেই বলেন, ‘এবারের বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব। আমি মনে করি, ব্যবসায়ে সুযোগ-সুবিধা বাড়লে উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদনে যেতে হলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটও ছিল ব্যবসায়ীবান্ধব। যে জাতীয় সংসদে এসব বার্ষিক বাজেট উপস্থাপিত ও অনুমোদিত হয়েছে, সেই সংসদের ৬১ দশমিক ৭ শতাংশই যদি পেশায় ব্যবসায়ী হন, সেখানে ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত আমাদের জাতীয় সংসদে সাবেক সরকারি আমলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও জোরালো উপস্থিতি রয়েছে, যারা আবার ঘুরেফিরে সেই ব্যবসায়-বাণিজ্যের সঙ্গেই সম্পৃক্ত।’ এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালে দেশের মোট শিল্প উৎপাদনে বৃহৎ আকারের প্রতিষ্ঠানের হিস্যা ৪৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এই একই সময়ে মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের হিস্যা ২৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এই সময়টিতে বৃহৎ আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের বাজার গ্রাস করে নিয়েছে। এই ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর মাত্র ৩ হাজার ফ্যাক্টরির কাছে জাতীয় বাজেটের সুফল কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে!
অর্থনীতিশাস্ত্রে এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, বাজারে যদি অলিগোপলি (একচ্ছত্র মনোপলি) বা কয়েকটি বড় কোম্পানি কোনো একটি পণ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়বে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে। প্রশ্ন হতে পারে, আমাদের বিজ্ঞ বাজেটপ্রণেতাবৃন্দ কি অর্থনীতির এসব বিষয় বোঝেন না? গূঢ় রহস্য না বোঝার কোনো কারণই নেই। আসলে আর্থিকীকরণকৃত বর্তমান আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের চিন্তা করার কোনো অবকাশ তাদের নেই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর মতো জনবান্ধব ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর, জনগণতান্ত্রিক বা জনবান্ধব বা সর্বজনীন কোনো জাতীয় বাজেট আশা করা যে আমাদের মানায় না, ব্যবসায়ী আইনপ্রণেতারা আমাদের সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তার পরও জনগণের প্রকৃত কল্যাণকামী একটি শোভন বাজেট-কাঠামো তো আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বর্তমান সরকারের কাছে আশা করতেই পারি। বৈষম্যহীন সমাজমুখী একটি বাজেটের লক্ষণ বাজেটের মূল দর্শনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শিক্ষা কোভিড-১৯-এর মতো ভয়াবহ ভাইরাসও আমাদের দিতে পারল না, সেটাই সবচেয়ে আফসোসের বিষয়। কোভিড মহামারিকালে আমাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে কৃষকসমাজ। অথচ বাজেটে তাদের হিস্যা দিন দিন কমতির দিকে।’ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, বিগত ৫০ বছরে (১৯৭২-২০২২) আমাদের দেশের জাতীয় বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ১ লাখ ৬ হাজার ৫৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এ বাবদ মোট ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে বাজেটের উন্নয়ন ব্যয়-বরাদ্দের নিরিখে মাত্র ১৩ দশমিক ৩৪ শতাশ ছিল পারিবারিক কৃষি-উদ্দিষ্ট, ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছিল গ্রামীণ নারী-উদ্দিষ্ট, ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ ছিল আদিবাসী-উদ্দিষ্ট এবং কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার-উদ্দিষ্ট মানুষের জন্য ছিল মাত্র ০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ভাবতে পারেন, এই সময়ে আদিবাসী মানুষের বাজেট বঞ্চনামাত্রা অথবা বৈষম্যমাত্রা ছিল ৩৭৬ শতাংশ!
অনেকেরই জানা আছে, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে সরকার। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বাজেট ঘাটতি সীমার মধ্যে রাখা, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের লক্ষ্য ও দর্শনকে মূল উপজীব্য করে প্রণীতব্য বাজেট গণ বা জনবান্ধব করার দাবি মৃদুস্বরে শোনা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীদের লবিস্ট গ্রুপ বরাবরের মতো কর ছাড়, শুল্ক ছাড়সহ নানাবিধ সুবিধা আদায়ে অর্থমন্ত্রী ও তার দলবলকে ছেঁকে ধরেছে। ভাবতে অবাক লাগে, পৃথিবীর অন্যতম কম কর-জিডিপির একটি দেশে আর কত কম কর ও বেশি শুল্ক ছাড় হলে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অসীম কর কমানোর চাহিদা মিটতে পারে! বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, নির্বাচনের বছরে এসে এসব অলিগোপলি গোষ্ঠীর চাপ সরকারকে না চাইলেও বহন করতে হবে। তাদের খুশি রাখতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আদায়েরও ছক কষা হয়েছে, যার পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যাশিত মাত্রায় প্রত্যক্ষ কর আদায়ে ব্যর্থতার কারণে আইএমএফ ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর আদায়ের এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। অথচ সরকারের যত কর আছে, তার মধ্যে এই ভ্যাটই হচ্ছে সবচেয়ে অন্যায্য ও অন্যায় কর। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ভ্যাট নামক এই অন্যায্য কর ফাঁকির সুযোগও অবারিত।
ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) যে সবচেয়ে অন্যায্য ও অন্যায় কর, তা সহজে বুঝতে হলে এই হিসাবটি দেখুন। ধরুন ‘ক’-এর আয় মাসে ২০ হাজার টাকা। আর ‘খ’ আয় করেন মাসে ১ লাখ টাকা। কিন্তু তারা দুজনই যদি মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে ১০ কেজি করে মিষ্টি কিনে ১ হাজার টাকা করে ভ্যাট দেন, তাহলে সেটা হবে ‘ক’-এর আয়ের ৯ শতাংশ, আর ‘খ’-এর আয়ের ১ শতাংশ। অর্থাৎ ‘ক’ ‘খ’-এর চেয়ে পাঁচ গুণ কম আয় করলেও ভ্যাট (পরোক্ষ কর) দিচ্ছে ‘খ’-এর সমান। এসবের সহজ মানে হলো, এই দুজনের মধ্যে আগেই আয় বৈষম্য ছিল পাঁচ গুণ, আর ভ্যাট (পরোক্ষ কর) সমান সমান দেওয়ার কারণে বৈষম্য আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেল। শাসকগোষ্ঠী, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ব্যবসায়ী, লবিস্ট সবাই-ই এই অন্যায় করটাই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। কারণ ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সবাইকেই একই দ্রব্যের ওপর একই হারে অন্যায় এই করটা দিতে হয়। আর এই কর সবাইকে দিতে হয় বিধায় প্রত্যক্ষ কর আদায়ের অযোগ্যতার বিষয়টিও ঢাকা পড়ে যায়। ধনীর সম্পদের ওপর করের (ওয়েলথ ট্যাক্স) বিধান থাকলেও প্রতিপালন হয় না, ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয় না, কালোটাকা ও অর্থপাচারও বন্ধ হয় না। অথচ বাজেট ঘাটতি সামাল দিতে ডলারে সুদ পরিশোধের শর্তসহ আরো অনেক গণবিরোধী পরামর্শ মেনে নিয়ে বিদেশি ঋণ নিতে হয়, ভ্যাটের হার ও আওতা বাড়াতে হয়।
বাংলাদেশের বিগত কয়েকটি বাজেটে সরকারকে বড় দাগে কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে দেখা গেছে, যাকে অর্থনীতিশাস্ত্রের দৃষ্টিতে ভিত্তি-দর্শন হিসেবে অভিহিত করা যায়। যেমন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’ শিরোনাম দিয়ে মহামারি করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে করা বাজেটে চলমান উন্নয়ন বজায় ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোভিড-১৯ পরবর্তী অভিঘাত ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সৃষ্ট অর্থনীতির সূচকের উত্থান-পতনের মধ্যে বেশ কিছু লক্ষ্য নিয়ে বাজেট প্রণীত হয়েছিল, যেখানে মূল্যস্ফীতি, মন্দা ও বেকারত্ব সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এসব লক্ষ্য কতটা অর্জিত হয় বা হয়েছে, তা নিয়ে জোরালো আলোচনা হতে পারে। গত অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য পূরণ তো দূরের কথা মূল্যস্ফীতি বরং রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে বাজেটপ্রণেতারা আভাস দিয়েছেন। বিশাল অঙ্কের এই বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার সরকারি যে লক্ষ্যের কথা প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে, তা কতটা পূরণ হবে সেটি সময়ই বলে দেবে। অন্যদিকে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা, রাজস্ব আদায়, ডলারের দর এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-সংক্রান্ত উৎকণ্ঠা নিরসনের চেষ্টাসংবলিত লক্ষ্য-দর্শন থাকবে বলে অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের বহুল আলোচিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (৪৭০ কোটি ডলার) ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পাওয়ার পর বাকি কিস্তির অর্থ ছাড়করণের জন্য সংস্থাটির শর্তের চাপ নতুন বাজেটকে যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে, সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফিসক্যাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, বাজেটের মূল দর্শন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি চূড়ান্ত হওয়ার পর সম্পদ কমিটির সভায় বিভিন্ন খাত ও ক্ষেত্রে বরাদ্দ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, যা আগামী জুন মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদে সবার সামনে তুলে ধরা হবে। জাতীয় বাজেটের লক্ষ্য-দর্শন যা-ই হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। কেননা, আমাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় দুর্বলতাই হচ্ছে কর আদায়ে সীমাহীন ব্যর্থতা। কর না দেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের অস্থি-মজ্জায় ঢুকে গেছে। ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত আমাদের রাষ্ট্র এখন পুরোপুরি ‘বাজার রাষ্ট্রে’ পরিণত হতে শুরু করেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সবকিছু তো ইতিমধ্যেই চলে গেছে করপোরেট গোষ্ঠীর হাতে। এমতাবস্থায় বৈষম্য নিরসনমুখী জনগণতান্ত্রিক একটি বাজেট-কাঠামো দেখতে পাওয়া কিছুটা দুরাশাই বটে। তার পরও, আশাই তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।’