বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শেখ রাসেলের কাছে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ম্যাচ শেষে স্বভাবতই মন খারাপ নিয়ে মাঠ ছাড়ার কথা পুলিশ দলের খেলোয়াড়দের। কিন্তু না, রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পরপরই ফুলের মালা ও ক্রেস্ট নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন ডাগ আউটে থাকা ফুটবলার ও কোচিং স্টাফরা। মাঠের প্রবেশ করে জানা গেল, ৩৭ বছর বয়সে এসে বুট জোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম।
তার বিদায় স্মরণীয় করে রাখতে এমন আয়োজন তাদের। শুধু পুলিশের নয়, প্রতিপক্ষ শেখ রাসেলের ফুটবলার আশরাফুল রানা, রহমতরা এসে যোগ দিয়েছেন সংবর্ধনায়।
হবিগঞ্জের ছেলে আমিরুল ২০০৬ সালে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে সিলেট অঞ্চলে ফুটবল খেলে বেড়াতেন তিনি। তাই পুলিশের ইন্টার ফুটবল টুর্নামেন্টে আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স করে ২০০৭ সালে পুলিশ ফুটবল দলে জায়গা করে নেন এই ফরোয়ার্ড। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। গোল করার দক্ষতা ও মাঠের পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে হয়ে ওঠেন পুলিশ ফুটবল দলের নিয়মিত একজন। স্বপ্ন দেখা শুরু করেন আমিরুল, পুলিশ ফুটবল দলকে নিয়ে যেতে চান দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ‘প্রিমিয়ার লিগে’। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন; কিন্তু পথটা মোটেও সহজ ছিল না।
২০১৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় পুলিশ, সে আসরে ১৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন আমিরুল। তার এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র থেকে প্রস্তাব আসে; কিন্তু পুলিশের চাকরি ছেড়ে সেই প্রস্তাবে রাজি হননি আমিরুল। এরপর এক বা দুই নয়, চারবারের প্রচেষ্টায় ২০১৮-১৯ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লিগে নাম লেখায় বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল দল। দলটির এমন অর্জনে বড় অবদান রেখেছিলেন আমিরুল। ১৮ গোল করে হয়েছিলেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে আলো ছড়ালেও প্রিমিয়ার লিগে এসে গোলের সেই ক্ষুধা দেখা যায়নি আমিরুলের মধ্যে। বয়সের ভারে মাঠে সেভাবে নিজেকে সঁপে দিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড।
পুলিশের জার্সিতে দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ‘ফুল স্টপ’ দিয়ে বুট জোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমিরুল। পুলিশ ফুটবল দলের তরুণদের সুযোগ করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। লম্বা এই ক্যারিয়ারে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হলেও সব কিছু মিলিয়ে খুশি এই ফরোয়ার্ড। নিজের বিদায়ের কথা বলতে গিয়ে কালের কণ্ঠকে আমিরুল বলেন, ‘যেভাবে চেয়েছিলাম হয়তো সেভাবে সব কিছু পাইনি। কিছু তো ঘাটতি থাকেই। তবে আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট। আসলে সব কিছুরই শেষ আছে, যেমন শুরু আছে তেমন শেষ আছে। আমি চিন্তা করলাম, আমার এখন যে অবস্থা, বয়স; আমার ছেড়ে দেওয়া উচিত। নতুনদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এখন আমার ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন কোনো স্বপ্ন নেই। আমার একটা স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলব; কিন্তু সেটা হয়নি। তাই আমি চাই, তরুণ ফুটবলাররা যেন নিজেদের স্বপ্ন বুনে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারে। ‘
পুলিশ ফুটবল দলে শুরুর গল্প বলতে গিয়ে আমিরুল বলেন, ‘যখন আমি ২০০৭ সালে পুলিশ দলে যোগ দিই (চাকরিতে যোগ দিই ২০০৬) তখন দল খেলত দ্বিতীয় বিভাগে। আমার একটা স্বপ্ন ছিল, দলকে সর্বোচ্চ লিগে খেলাব। এই স্বপ্ন নিয়ে ধাপে ধাপে এগোতে থাকি। আমার যারা সতীর্থ ছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা করতাম। কিভাবে দলটার উন্নতি করা যায়। অনেক সময় ক্লাব ম্যানেজমেন্টের যথাযথ সমর্থন পাইনি; কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। নিজেদের চেষ্টায় দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উঠে আসি। সেবার (২০১৩ সালে) আমি ১৩ গোল করি। এরপর চারবারের চেষ্টায় ২০১৯ সালে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পাই। ‘
বুট জোড়া তুলে রাখার পর কোচিং পেশায় আসবেন কি না সেটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি আমিরুল। এখন পুলিশের এএসআই পদে চাকরিরত তিনি। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন। আমিরুল বলেছেন, ‘যদি সুযোগ হয় তবে কোনো দিন হয়তো কোচিং পেশায় যাব। স্বপ্ন আছে, দেখি কী করা যায়। এই খেলার জন্য পুলিশের এসআই পরীক্ষা দিতে পারিনি, তাই কোচিং কোর্স করার সুযোগ হয়নি। সুযোগ পেলে অবশ্যই করব। ‘