ছোট পর্দার অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ‘প্রেমিক’ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফিকে আটক করেছে র্যাব-১। তাকে আটকের পর শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে হিমু কীভাবে মারা গেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায় র্যাব।
রুফিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে রুফির বিয়ে হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যার কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের জেরে রুফির সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে রুফির বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও তার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
র্যাব বলছে, রুফি আরেকটা বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ করত এবং ৪ মাস আগেও তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। রুফি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিমুর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডা হতো।
র্যাব জানায়, গত ২-৩ বছর ধরে হিমু ‘Bigo Live Apps’-এ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল টাকা অপচয় করেছে। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো।
রুফির বরাতে র্যাব আরও জানায়, গত ২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রুফি হিমুর উত্তরার বাসায় আসে। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করে। তখন হিমু রুমের বাইরে থেকে মই নিয়ে এসে রুমের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে জানায়।
হিমু এর আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যা করার কথা বললেও সে পরে আত্মহত্যা করেনি। তাই এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার কথা বললে রুফি সেটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু হিমু একটু পর বেঁধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে রুফি তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সে সময় পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরের সহযোগিতায় রশি কেটে তাকে নিচে নামানো হয়। পরে রুফি, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।
লক্ষ্মীপুরের মেয়ে হুমায়রা হিমু মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। ২০০৬ সালে টেলিভিশন নাটক ‘ছায়াবীথি’-তে প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর পিআই (প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর) নামে একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। তারপর ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ছোটপর্দায় পেয়েছেন দারুণ জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি। কমেডি গল্পের নাটক মানেই হুমায়রা হিমু।
ছোটপর্দার পাশাপাশি হিমু ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রেও পা রাখেন। সম্প্রতি দেওয়ান নাজমুলের পরিচালনায় ‘তোরে কতো ভালোবাসি’ নামে একটি সিনেমার কাজ শেষ করেন হিমু।