গাজীপুরের পর অবশিষ্ট চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ‘সাংবিধানিক বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টি (জাপা)। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠেয় পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সবগুলোতে অংশগ্রহণের বিষয়ে এতদিন তেমন আগ্রহ না থাকলেও, হঠাৎ দলীয় অবস্থান পরিবর্তনে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে দলটিতে।
জাপার দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে পৃথক আলোচনায় বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কিংবা জয়ী হতে পারেন—পাঁচ সিটির একটিতেও এমন শক্তিশালী প্রার্থী নেই জাপার। অতীতেও কখনো এই পাঁচটি সিটিতে জাপার মেয়র ছিলেন না। এমনকি, অতীতে এই পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জাপার কেউ প্রতিযোগিতার ধারেকাছেও যেতে পারেননি। এছাড়া, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারেও আস্থার সংকট রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের। তার পরেও, দলের ভেতর-বাইরের নানা সমীকরণে অংশগ্রহণ দেখাতে শেষ পর্যন্ত পাঁচ সিটিতেই মেয়র পদে প্রার্থী দিতে হয়েছে দলটিকে।
প্রথমে, গত ১৭ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাবেক স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিনকে মনোনয়ন দেয় জাপা। সচিব থাকাকালে নানা কারণে আলোচিত নিয়াজ উদ্দিনের প্রার্থিতা ইতিমধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে বৈধ হয়েছে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার অবশিষ্ট চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী নাম ঘোষণা করেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রাজশাহীতে মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, খুলনায় মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বরিশালে প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন তাপস এবং সিলেট সিটি করপোনেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মো. নজরুল ইসলাম বাবুকে মনোনয়ন দিয়েছে জাপা।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল তার বনানী কার্যালয়ে চার জন মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের সমালোচনা করছি। আমরা কোনো দলের সঙ্গে না গেলেই বলা হয় অমুকের দালালি করছি। যারা আমাদের সমালোচনা করেন, তারা তাদের স্বার্থেই কথা বলেন।’
পাঁচ সিটিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সব নির্বাচনে আমরা অংশ নেব—পার্টির এমন সিদ্ধান্ত ছিল। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা আশাবাদী হতে চাই। আশা করছি, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ইসি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। আমাদের প্রার্থীরা যেন বিজয়ী হন, সেই মনোভাব নিয়েই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জাপার আস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রতি আস্থা অনেকাংশেই দেশের মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। ভোটের প্রতি আস্থা ফেরাতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
সিটি করপোরেশনের মতো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাপা অংশ নিচ্ছে কি না, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দেশ ও জাতির প্রত্যাশা পূরণের স্বার্থে কাজ করে এগিয়ে যেতে চাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি।’
এসময় জিএম কাদেরের পাশে থাকা জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে নেই। সংসদে আমাদের বক্তব্য প্রমাণ করে, সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো প্রেম নেই। আমরা নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছি, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।’ তিনি জানান, পাঁচ সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দলের পক্ষ থেকে তারা ইসির সাথে সাক্ষাৎ করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পরবর্তী সময়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার নির্বাচনি জোট ছিল, সেটা এখন আর নেই। আমরা কখনোই ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করিনি, আমরা ‘লাঙ্গল’ নিয়েই নির্বাচন করেছি। কারো দয়ায় জাপা নির্বাচন করবে না। আমরা কাউকে ভয় করে রাজনীতি করি না।’
এ সময় উপস্থিত থাকা জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ৩০০ আসনেই জাপার সম্ভাব্য প্রার্থিতা মাঠে আছেন। তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাপা ঐক্যবদ্ধ। আগামী সংসদ নির্বাচনে জাপা যেন সম্মানজনক অবস্থানে যেতে পারে, সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।