শাটল ট্রেন।৩০ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতের প্রধানতম বাহন।সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের হাজারো স্মৃতি,সুখ,দুঃখ আবেগ,অনুভূতিরও বাহন এই শাটল।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ এটি।এক সময় চাইলেই আলাদা করে বলে দেয়া যেত এই ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল।সময়ের সঙ্গে যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল শাটলের ঐতিহ্য,রূপ আর রং।বাহারি আল্পনার চাদড়মোড়া ক্যানভাসে লাগে মলিনতার ছোঁয়া।তবুও শাটল বলতে সেই রঙিন শাটলই ভেসে ওঠে শিক্ষার্থীদের।
এরপর হঠাৎ একদিন শিক্ষার্থীরা দেখতে পেলেন তাদের প্রাণের শাটল আল্পনার রঙ্গে রাঙিয়ে তুলছেন জার্মান শিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার।দেশ বিদেশে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টে গ্রাফিতি আঁকাই এই শিল্পীর নেশা ও পেশা। গত ২১ তারিখ থেকে শাটল রাঙাতে শুরু করেন এই শিল্পী।পরে তার সঙ্গে এসে যোগ দেন তার শিল্পী স্ত্রী লিভিয়া।
জিলিঞ্জার বলেন,আমি বিভিন্ন ক্যানভাসে গ্রাফিতি আঁকি,তবে ট্রেন হচ্ছে আমার সবচেয়ে পছন্দের মাধ্যম।৩ বছর ধরেই আমার মাথায় ছিল যে আমি শাটল ট্রেনে গ্রাফিতি আঁকব।অবশেষে কাজটা যে ভালভাবে শেষ করতে পেরেছি এজন্য আমি আনন্দিত।
তার স্ত্রী লিভিয়া মাদ্রেজ বলেন,গ্রাফিতি আঁকার জন্য ট্রেন খুবই দারুণ একটি মাধ্যম।কারণ এটি একটি ভ্রাম্যমাণ ক্যানভাস,বহু জায়গায় বহু মানুষ এর সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পারে।অন্যান্য শিল্পকর্মের মতো টিকেট কেটে দেখার মতো কিছু নয়।ফলে এটি সর্বজনীন ও সবার জন্য উপভোগ্য।
নিজেদের কাজের বিষয়ে লিভিয়া বলেন,একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারটি অসাধারণ।একে অপরকে উৎসাহ দেয়া যায়।ভিন্ন ভিন্ন আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে এখানে।
বর্তমান সময়ের অনেক শিক্ষার্থীই ঐতিহ্যবাহী সেই রঙিন শাটলের দেখা পাননি।আর যারাও বা দেখা পেয়েছেন রঙতুলির এই সমন্বিত ও সুবিশাল ক্যানভাস তারাও শাটলের বুকে আগে দেখেননি।তাই সাবেক বা বর্তমান সকল শিক্ষার্থীর মাঝেই শাটল ঘিরে নতুন করে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ শরিফ বলেন,শাটলের অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে বিবর্ণ শাটল দেখে হতাশ হয়েছিলাম।
এখন শাটল দেখেই ভাল লাগছে।আমিও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল নিয়ে গর্ব করতে,গল্প করতে পারব।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী বেনজির আফরিন বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ সময়ে এসে শাটলকে সেই আগের রূপে ফিরে যেতে দেখে আনন্দ লাগছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রধান প্রধান প্রতীকগুলোকে উপজীব্য করে তার শিল্পকর্মটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন লুকাস।
শিল্পীর নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন এই শিল্পকর্মে স্থান পেয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার,সুন্দরবনের প্রধান প্রধান কয়েকটি জায়গা,চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন,সংসদ ভবন,সিআরবি,সূর্যাস্তের দৃশ্য,সমুদ্র বন্দর ও পাহাড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য।দৃশ্যের ফাঁকে ফাঁকে কোথাও লিখে রেখেছেন উৎসাহমূলক বাক্য ঋৎবব ষরশব ধ নরৎফ!কিংবা ণড়ঁ মড়ঃধ শববঢ় ড়হ ৎঁহহরহম!
জানা যায়,গত ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরীণ আখতারকে এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবনা পাঠান লুকাস।সানন্দে অনুমতি দেন উপাচার্য।এরপরই শুরু হয় পরিকল্পনা ও কাজের প্রস্তুতি।নান্দনিক এই শিল্পকর্মে সহযোগিতা করেছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক অরূপ বড়ুয়া এবং তার কিছু শিক্ষার্থী।
শাটলের এই সৌন্দর্য্য যেন অক্ষুণ থাকে সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন অরূপ বড়ুয়া।
সাবেক শিক্ষার্থী বাঈজিদ ঈমন বলেন,আমরা একসময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকারের মাধ্যমে শাটলকে প্রাণবন্ত করে রাখতাম।এবার এই রঙের ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের মনেও রং লাগুক।তারা হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনুক।শিল্পকর্মটি শেষ করে ২৭ তারিখ নিজ দেশে ফিরে যান লুকাস-লিভিয়া শিল্পী দম্পতি।