জিনেদিন জিদান শুধু দেশ ফ্রান্সের নয়, ফুটবল বিশ্বেরই জীবন্ত কিংবদন্তি। খেলোয়াড় এবং কোচ, দুই ভূমিকাতেই যিনি প্রমাণ করেছেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব। এমন একজন মহানায়ককে অসম্মান করে কথা বলা আর মৌচাকে ঢিল ছোড়া যে একই কথা, সেটা খুব দ্রুতই টের পেলেন ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) সভাপতি নোয়েল লা গ্রায়েত। কিংবদন্তি জিদানকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে ফেঁসে যান তিনি। তীব্র সমালোচনার মুখে জিদানের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলেন নোয়েল লা গ্রায়েত।
২০২১ সালে আচমকাই রিয়াল মাদ্রিদের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন জিদান। এরপর থেকেই গুঞ্জন, ফ্রান্স জাতীয় দলের কোচ হতেই বিশ্বসেরা ক্লাব রিয়ালের চাকরি ছেড়েছেন জিদান। ধারণা করা হচ্ছিল, কাতার বিশ্বকাপের পরই বর্তমান কোচ দিদিয়ের দেশমের স্থলাভিষিক্ত হবেন ফরাসিদের প্রিয় জিজু। কিন্তু এফএফএফ ৫৪ বছর বয়সি দেশমের ওপরই আস্থা রেখেছে। ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দেশমকেই কোচ রেখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এফএফএফ।
দেশম এবং জিদান একে অন্যের সাবেক সতীর্থই শুধু নন, তারা ভালো বন্ধুও। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সকে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জেতান। তাই বন্ধু দেশমকে রেখে দেওয়ায় জিদানের কি-ই বা বলার আছে! জিদান তাই নাকি অন্য কিছু ভাবছেন। এরই মধ্যে নাকি জিদান যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন। গুঞ্জন আছে ব্রাজিলের কোচ হওয়া নিয়েও।
দেশমের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পর ফ্রান্সেরই আরএমসি স্পোর্টসকে দেওয়া নোয়েল লা গ্রায়েতের এক সাক্ষাৎকারে জিদানের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। উত্তরে নোয়েল লা গ্রায়েত বলেন, ‘জিদান ব্রাজিলে? সে যা ইচ্ছা করতে পারে। আমার কিছু যায় আসে না। জিদান যদি আমাকে ফোন করত, তাহলে কী হতো? কিছুই হতো না। আমি ওর ফোন তুলতামই না।’
তার এই বেফাঁস মন্তব্য যেন ফ্রান্সের ফুটবল অঙ্গনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ফুটবল বিশ্বেও। তবে জিদানের পক্ষ নিয়ে প্রথম মুখ খুলেন ফ্রান্সের বর্তমানের সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমবাপ্পে লেখেন, ‘জিদানই ফ্রান্স। আমরা একজন কিংবদন্তিকে এভাবে অসম্মান করতে পারি না।’ এমবাপ্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এফএফএফ সভাপতিকে ধুয়ে দেয় রিয়াল মাদ্রিদও। স্প্যানিশ ক্লাবটি দ্রুতই গ্রায়েতের কাছে এমন লাগামহীন মন্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করে। পরে ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী অ্যামেলিয়ে উয়েদা-কাস্তেরা এফএফএফ সভাপতিকে জিদানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নিদের্শ দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এফএফএফ সভাপতি গ্রায়েত দ্রুতই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন জিদানের কাছে, ‘আমি আমার সেই মন্তব্যগুলোর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি, যে মন্তব্যগুলো একবারেই আমার চিন্তাভাবনার প্রতিফলন নয়। সে যে মানের খেলোয়াড় ছিল এবং সে যে মানের কোচ, তার প্রতিও আমার বিবেচনার প্রতিফলন নয়।’