মাঠে নামার আগেই শঙ্কা ছিলো বাংলাদেশ শিবিরে। সেই শঙ্কা উড়িয়ে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়েকে ১৫১ রানের টার্গেট দিয়েছিলো টিম টাইগার্স। জিম্বাবুয়ে করতে পারে ১৪৭ রান।
ব্রিসবেনের গ্যাবায় টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খুব বেশি ভালো নাহলেও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি আর আফিফের দৃঢ়তায় ১৫১ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
বোলিংয়ের শুরুটা অবশ্য দুর্দান্ত করেছিলো বাংলাদেশ। পাওয়ার পেল’তেই তুলে নিয়েছিল্লো ৪ উইকেট। শুরুতেই জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের সামনে আগুন ঝরিয়েছেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। তার সঙ্গে পরে যোগ দিয়েছেন টানা অনেকদিন ফর্মে না থাকা মুস্তাফিজুর রহমান।
টানা তিন ম্যাচে শুরুর ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ১৫১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই তাসকিনের আঘাতে নড়বড়ে হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের তৃতীয় বলেই জিম্বাবুয়ে ওপেনার ওয়েসলি মাধভেরেকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হজম করেছিলেন তাসকিন। পরের বলেই ডিপ থার্ডে মুস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ বানান মাধভেরেকে।
তৃতীয় ওভারে এসে আবারও তাসকিন ঝলক। ঠিক যেন প্রথম ওভারের পুনরাবৃত্তি। ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হজম করেছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের কাছে। পরের বলেইউ তাসকিন সাজঘরে পাঠান আরভিনকে। টাইগার পেসারের বলে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে ধরা পড়েন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
পঞ্চম ওভারে মোসাদ্দেককে বোলিংয়ে আনলে অবশ্য ২ বাউন্ডারিতে রানের গটি তোলার চেষ্টা করেছিলেন শন উইলিয়ামস আর মিল্টন শুম্বা। তবে পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে সেটি পুষিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে মিল্টন শুম্বাকে মিড-অফে সাকিবের হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ বানান মুস্তাফিজ।
জিম্বাবুয়েকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটাও মুস্তাফিজ দিয়েছেন দুই বল বাদেই। ওভারের পঞ্চম বলে শূন্য রানেই জিম্বাবুয়ের সেরা পারফর্মার সিকান্দার রাজাকে সাজঘরে পাঠান কাটার মাস্টার। স্কয়ার লেগে আফিফের হাতে ধরা পড়েন রাজা।
পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৩৬ রান তুলতে পারে জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকেই জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন রেজিস চাকাভা আর শন উইলিয়ামস মিলে। ১০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৬৪ রান।
দুজনে বেশ প্রতিরোধ গড়েছিলেন টাইগার বোলারদের বিপক্ষে। তবে তাদের সেই প্রতিরোধও ভেঙেছেন তাসকিন। ১২তম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে সোহানের ক্যাচ বানিয়েছেন চাকাভাকে। ওভারটিও নিয়েছেন মেডেন।
চাকাভা যাওয়ার পর ক্রিজে আসেন রায়ান বার্ল। ক্রিজে এসেই টাইগার বোলারেদের চোখ রাঙানি সামলে পাল্টা আক্রমণ করেন বার্ল। তাসকিনের মেডেনের পরের ওভারেই মোসাদ্দেককে বাউন্ডারি-অভার বাউন্ডারি দিয়ে শুরু। বার্ল আর উইলিয়ামস মিলে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে গেছেন জয়ের দিকে।
দুজনের জুটিতে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। শেষ দুই ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ রানের। ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে ফসকে যেতেই পারে এমন শঙ্কা পেয়ে বসেছিলো সমর্থকদের। এই সময়ই টাইগারদের ত্রাতা হয়ে এলেন অধিনায়ক সাকিব।
১৯ তম ওভারে বল করতে এসে চতুর্থ বলেই আউট করেন মাত্র ৪২ বলে ৬৪ রান করে জিম্বাবুয়েকে জয়ের স্বপ্ন দেখানো উইলিয়ামসকে। আউটটি অবশ্য রান আউট। তবে নিজের বলেই নিজে ফিল্ডিং করে যেই ডিরেক্ট থ্রোতে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্ট্যাম্প ভেঙেছেন সাকিব সেটি নিজের উইকেট বললে দ্বিমত থাকবে না কারোরই।
তখনও অবশ্য নাটকের বাকি ছিলো বাংলাদেশের শেষ ওভারে। জিম্বাবুয়ের হজয়ের জন্য লাগতো ১৬ রান। মল করতে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রথম বলে লেগ বাইয়ে ১ রান হওয়ার পর দ্বিতীয় বলেই আফিফের হাতের ক্যাচ বানিয়ে ব্র্যাড ইভানসকে ফেরান মোসাদ্দেক। এরপরের তানা দুই বলে চার ছক্কায় ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ক্রিজে আসা রিচার্ড এনগারাভা। শেষ দুই বলে ৫ রান লাগতো জিম্বাবুয়ের।
পঞ্চম বলে স্ট্যাম্পিং এনগারাভা। ম্যাচ ঝুকে যায় বাংলাদেশের দিকে। শেষ বলে যখন লাগে ৫ রান তখন আরো এক নাটক। ইনিংসের শেষ বলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটার ব্লেসিং মুজারাবানিকে স্ট্যাম্পিং করেছিলেন সোহান। বাংলাদেশ ৪ রানে ম্যাচ জিতেছে বলে উল্লাস করে মাঠও ছেড়ে উঠে গিয়েছে। তখনী দেখা গেলো সোহান বল ধরেছেন স্ট্যাম্পের সামনে থেকেই। নো বল।
আবারো মাঠে নামলো দুই দল। শেষ বলে তখন লাগে ৪ রান। মোসাদ্দেকের করা ঐ বলটি ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না মুজারাবানি। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৩ রানের ব্যবধানে জিতেই মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ, সেই সঙ্গে বেঁচে রইলো সেমিফাইনালের আশাও। তিন ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তেবিলের দুইয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ভারত।