স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কিছুদিন আগেই বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে জয় নিশ্চিত করতে হয়েছে টাইগারদের। তবে সেই জিম্বাবুয়েকে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) পাত্তাই দেয়নি ভারত। ব্যাট ও বল দুই বিভাগেই স্বাগতিকদের শাসন করেছে শিখর ধাওয়ানরা। বল হাতে দীপক চাহার শুভ সূচনা করে দিয়েছিল। এরপর শেষটাও রঙ্গিন করেছেন অক্ষর প্যাটেল ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণারা। ব্যাট হাতে দুই উদ্বোধনী ব্যাটারই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলেন। জিম্বাবুয়ের ১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের দুই উদ্বোধনী ব্যাটারই জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। শিখর ধাওয়ান ৮১ ও শুভমন গিল ৮২ রানে অপরাজিত ছিলেন । ১১৫ বল হাতে রেখে ১০ উইকেটের বড় জয় দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে বৃহস্পতিবার টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লোকেশ রাহুল। অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ছাড়া আরও দুই উইকেটরক্ষক ব্যাটার সানজু স্যামসন ও ইশান কিশানকে নিয়ে একাদশ সাজায় ভারত। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছেন ডানহাতি পেসার দীপক চাহার। সেই চাহারই সফরকারিদের দারুণ সূচনা এনে দেন। খেলা শুরুর আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রয়াত প্রাক্তন আম্পায়ার রুডি কোয়ের্তজেনকে স্মরণ করলেন দু’দলের ক্রিকেটাররা। ভারতের বিপক্ষে বেশ ধীরে খেলা শুরু করেছেন স্বাগতিকদের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার ইনোসেন্ট কাইয়া ও মারুমানি। উদ্বোধনী জুঁটিতে ২৫ রান করেন এই দুই ব্যাটার। এরপর ইনিংসের সপ্তম ওভারে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন দীপক চাহার। চাহারের গতিতে পরাস্ত হলে ইনোসেন্ট কাইয়ার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক সাঞ্জু স্যামসনের গ্লাভসে বন্দী হয়। প্রথম উইকেটে ব্যক্তিগত ৪ রানে সাজঘরে ফিরেন কাইয়া। এরপর নবম ওভারের প্রথম বলে আরেক ওপেনার মারুমানিকেও সাজঘরে ফেরান চাহার। এর মাঝে মাত্র একরান যোগ হয়েছে স্বাগতিকদের স্কোরবোর্ডে।
মারুমানিকেও কাইয়ার মতোই আউট করেছেন চাহার। ২৬ রানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটারকে হারিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। টপ অর্ডারের বাকি ব্যাটাররা এই খাদ থেকে দলকে আর টেনে তুলতে পারেননি। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৩১ রানের মাথায় মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম উইকেটের শিকার হয়ে শিখর ধাওয়ারেন হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন শন উইলিয়ামস। পরবর্তী পাঁচ বলেও কোনো রান যোগ করতে পারেননি মাধেভেরে ও সিকান্দারা রাজা। স্কোরবোর্ডে ৩১ রান থাকতেই চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে স্বাগতিকদের। দীপক চাহারের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। পঞ্চম উইকেটে জুুঁটিতে সিকান্দার রাজা ও চাকাভা ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করেন। এই জুঁটিতে দলীয় ৫০ রান পূর্ণ হয় স্বাগতিকদের। শেষ ৩৫ রানের পার্টনারশিপ গড়তে পেরেছেন। ইনিংসের ১৭তম ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফিরেন সিকান্দার রাজা। আউট হওয়ার আগের ১৭ বলে মাত্র ১২ রান করেছেন তিনি। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার বলে শিখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করে দেয়া এই মারকুটে ব্যাটার। দলীয় ৮৬ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ২ চারের সাহায্যে ১১ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন রায়ার্ন বার্ল। কিন্তু ২১তম ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার পঞ্চম বলে ক্যাচ উঠিয়ে দেন তিনি। আকাশে ভাসতে থাকা বল লুফে নেন শুভমন গিল। অপরপ্রান্তে অধিনায়ক চাকাভা সফরকারি বোলারদের বিপক্ষে একাই লড়ে গেছেন। কিন্তু ১০৭ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরতে বাধ্য হন তিনিও। অক্ষর প্যাটেলের ঘূর্ণিতে সরাসরি বোল্ড হন তিনি। চারের সাহায্যে ৫১ বলে ৩৫ রান করেন জিম্বাবুয়ের এই অধিনায়ক। এরপর স্কোরবোর্ডে আর তিন রান যোগ করতেই অষ্টম উইকেটে সাজঘরে ফিরেন লুকি জঙ্গি। ব্যক্তিগত ১৩ রানের মাথায় অক্ষর প্যাটেলের ঘূর্ণিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। নবম উইকেটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ব্রড ইভান্স ও এনগারাভা। রেকর্ড গড়ে এই উইকেটে ৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন এই দুই ব্যাটার। নবম উইকেটে জুঁটিতে এত বড় সংগ্রহ আগে কখনো পায়নি স্বাগতিকরা। হার না মানা এনগারাভার ইনিংস থামে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার ইয়র্কারে বোল্ড হন তিনি। এরপর জিম্বাবুয়ের ইনিংস আর বেশিদূর গড়ায়নি। পরের ওভারেই ব্যক্তিগত ৮ রানে সাজঘরে ফিরেন নৌচি। শেষপর্যন্ত ৩৩ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন ব্রড ইভান্স। ভারতের হয়ে তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন দীপক চাহার, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও অক্ষর প্যাটেল। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ।