জি৭ নেতারা যেসব পরিকল্পনা করছেন, সেগুলোর লক্ষ্য যে চীনকে প্রতিহত করা, সেটা সরসরি উলেখ করা থেকে বিরত থেকেছেন তাঁরা। তবে জার্মানিতে জোটের শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে তাঁরা চীনের নাম উলেখ করেই বিবৃতি দিয়েছেন।
চীনের বাণিজ্যনীতির নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জি৭ নেতারা এটাও জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে তাঁরা কোনোভাবেই রাশিয়াকে জয়ী হতে দেবেন না।
জার্মানির ব্যাভারিয়ান আল্পসে রবিবার থেকে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সর্বাধিক শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭-এর শীর্ষ সম্মেলন।
বিজ্ঞাপন
সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার জোট নেতারা বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের কর্মকাণ্ড ‘অস্বচ্ছ এবং তা বাজারকে বিকৃত করে’।
জোট নেতারা অঙ্গীকার করেন, তাঁরা চীনের ওপর ‘কৌশলগত নির্ভরতা’ কমিয়ে আনবেন।
চীনের মানবাধিকার প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন জি৭ নেতারা। তাঁরা চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বেইজিংকে আহবান জানান।
তিব্বত ও শিনচিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে তাঁদের উদ্বেগের অন্যতম কারণ, তা-ও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
এর আগে শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিপরীতে নতুন প্রকল্প দাঁড় করাতে ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গড়ার ঘোষণা দিয়েছে জি৭। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ হাজার কোটি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ৩০ হাজার কোটি ডলারের জোগান দেবে। এ বিপুল অর্থ বিশ্বের মধ্য ও নিæ আয়ের দেশগুলোয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে।
গত বছরের শীর্ষ সম্মেলনে তহবিলের অঙ্ক নির্ধারণ করা হয় এবং এবারের সম্মেলনে অর্থ ব্যয়ের বিস্তারিত পরিকল্পনায় নিজেদের ঐকমত্য নিশ্চিত করেন জি৭ নেতারা।
‘রাশিয়াকে মূল্য দিতে হবে’ : এশিয়ার বৃহত্তম শক্তি চীনই জি৭ নেতাদের মাথাব্যথার একমাত্র কারণ হয়ে থাকেনি, এতে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’।
জোটের সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেন, ‘জি৭ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন জানাচ্ছে। এই যুদ্ধের কারণে প্রেসিডেন্ট (ভ্লাদিমির) পুতিন ও তাঁর প্রশাসনকে যেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আমাদের চেষ্টা ও তৎপরতা চালিয়ে যাব। ’ এ যুদ্ধে ‘পুতিনকে কিছুতেই জয়ী হতে দেওয়া যাবে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্মেলন চলাকালে প্রতিদিনই রাশিয়ার ওপর আরো চাপ বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। সমাপনী দিনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রতিষ্ঠা করা হবে জলবায়ু ক্লাব
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক লড়াইয়ের পাশাপাশি পরিবেশ বিষয়ে লড়াইয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন জি৭ নেতারা। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তৎপরতা বাড়াতে আগ্রহী দেশগুলোকে নিয়ে এ বছরের শেষ নাগাদ ‘জলবায়ু ক্লাব’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
পরিবেশবাদীরা অবশ্য এ ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয়। তাঁদের অভিযোগ, জি৭ জোট জলবায়ু ক্লাব গঠন এবং এ তৎপরতা নিয়ে স্পষ্ট কোনো রূপরেখা দেয়নি। এ ধরনের ক্লাব গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কেননা তাঁরা মনে করে, পরিবেশবিষয়ক যথেষ্ট সংগঠন রয়েছে।