জুলাই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশনের কাজ শুরু হচ্ছে। প্রবাসী, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিয়ে জুলাই মাসের শুরু থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে পাইলট আকারে সর্বজনীন পেনশন দেশের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু হবে। তবে যে কর্তৃপক্ষের অধীনে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে, তা এখনো গঠন করা হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর হতে পারে। এর সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে পরে তা সারা দেশে বিস্তৃত করা হবে। তবে শুরুর প্রক্রিয়াটি হবে সীমিত পরিসরে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা সারা দেশে চালু হওয়ার পর অন্তত পাঁচ বছর তা ঐচ্ছিক রাখা হবে। পরে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
আসন্ন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পেনশন কার্যক্রমের বিষয় উল্লেখ করবেন বলে জানা গেছে। গত ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩’ পাশ হয়। আইনের খসড়া বিধিও চূড়ান্ত পর্যায়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইনের আওতায় ছয় ধরনের প্রোডাক্ট স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি প্রায় ১০ কোটি নাগরিককে ছয়টি শ্রেণি অনুযায়ী ভাগ করে এই স্কিম নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো, বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী পেনশনার, প্রবাসী/ অনিবাসী পেনশনার, শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক জনগোষ্ঠী, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী ও শিক্ষার্থী।
প্রতিটি স্কিম হবে স্বতন্ত্র। সব স্কিমে একটি ন্যূনতম চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। কেউ চাইলে বেশিও জমা করতে পারবে। কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত তহবিলে সংশ্লিষ্ট প্রোডাক্ট স্কিমের হিসাবে যার যত বেশি চাঁদা জমা পড়বে, তার আর্থিক সুবিধা পাওয়ার হারও তত বেশি হবে।
চলতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের দাপ্তরিক আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়েই তাদের দাপ্তরিক কার্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইন অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সি সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাসিক পেনশন সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদা দাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। চাঁদা দাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। চাঁদা দাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। তবে নতুন বছরের বাজেটে এখাতে কোনো বরাদ্দ থাকছে না। সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়েই কর্তৃপক্ষ গঠন হবে। সূত্র জানায়, সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন হলে তাদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক খাতে ২-৩ কোটি টাকা লাগতে পারে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে থাকা বরাদ্দ মেটানো সম্ভব হবে।