বিশ্বের সবচাইতে ব্যস্ততম নগরী যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রতি বছরই ট্রেন বাস এবং আন্ডার গ্রাউন্ড ষ্টেশনগুলোতে বাড়ছে অপরাধ। সম্প্রতি ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (টিএফএল) লন্ডনের কয়েকটি আন্ডার গ্রাউন্ড রুট এবং ষ্টেশনে সংগঠিত অপরাধের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (TfL) প্রকাশ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোন আন্ডারগ্রাউন্ড রুটে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়, আবার কোন লাইনে বা টিউব স্টেশনে অপরাধের প্রবণতা কম এর একটি চিত্র তুলে ধরেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত লন্ডনের পরিবহন ব্যবস্থায় মোট ৩১,৬৪৮টি অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৬,০০০-এরও বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে টিউবের ভেতর বা টিউব স্টেশনে। TfL- ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই চিত্র তুলে ধরেছে, তাদের সূত্র মতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ সাইবার আক্রমণের কারণে পরবর্তী তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লন্ডনে ফোন ছিনতাই এবং অন্যান্য চুরি সংক্রান্ত, টিউবের অভ্যন্তরে সংঘটিত মোট অপরাধের ৫০% এর বেশি ছিল চুরি। ২০২৩ সালের তুলনায় ছিনতাই ১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। চুরির পর সবচেয়ে সাধারণ অপরাধ ছিল সহিংসতা, যা আগের বছরের তুলনায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অধিকাংশ সহিংসতাই ছিল “আঘাতবিহীন। লন্ডন শহরের সেন্ট্রাল লাইন ছিল টিউব ক্রাইম হটস্পটের তালিকায় শীর্ষে — সেখানে মোট টিউব অপরাধের ১৭% সংঘটিত হয়েছে।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ৮,০০০ এর বেশি টিউব অপরাধের মধ্যে সেন্ট্রাল লাইনে ১,৪১৯টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। TfL ৯৪টি সেন্ট্রাল লাইনের ট্রেনে CCTV ক্যামেরা বসিয়েছে, যা £৫০০ মিলিয়নের উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ। নর্দার্ন লাইন ছিল দ্বিতীয় সর্বাধিক অপরাধপ্রবণ রুট, যেখানে ১,৩২০টি অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে — মোট টিউব অপরাধের ১৬%। ওয়াটারলু অ্যান্ড সিটি লাইন ছিল সবচেয়ে নিরাপদ — ব্যাংক এবং ওয়াটারলুর মধ্যকার এই ছোট রুটে মাত্র ৩টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা টিউবের মোট অপরাধের মাত্র ০.০০০৪%। লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের বিশ্ববিখ্যাত স্টেশনগুলোও অপরাধের জন্য হটস্পট হয়ে উঠেছে। কিংস ক্রস সেন্ট প্যানক্রাস ছিল তালিকার শীর্ষে — ২৭২টি স্টেশনের মধ্যে সেখানে ৩৫৯টি অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে (মোট অপরাধের ৪.৭%)। অক্সফোর্ড সার্কাস দ্বিতীয় স্থানে ছিল, যেখানে ২৮১টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে (৩.৭%)। টটেনহ্যাম কোর্ট রোড ছিল তৃতীয় অবস্থানে, ২৭১টি অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে (৩.৫%)। এছাড়া শীর্ষ পাঁচে ছিল স্ট্র্যাটফোর্ড (২৩৭টি অপরাধ, ৩.১%) এবং ফিন্সবারি পার্ক (২০৫টি অপরাধ, ২.৭%)।
লন্ডনের বিখ্যাত লাল রঙের বাসগুলোও একই সময়ে কয়েক হাজার অপরাধের সাক্ষী হয়েছে। চুরি ছিল TfL-এর জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা, তবে সহিংস অপরাধ বাস অপরাধের প্রায় ২২% জুড়ে ছিল।
সবচেয়ে বেশি বাস অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোঃ
ওয়েস্টমিনস্টার ছিল সবচেয়ে বেশি বাস অপরাধপ্রবণ এলাকা — জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৬০০টির বেশি অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে। এর পর ছিল সাউথওয়ার্ক (৪৪০টি অপরাধ) এবং ল্যাম্বেথ (৩৬৩টি অপরাধ)। লন্ডনের পরিবহন ব্যবস্থায় হাজার হাজার অপরাধ ঘটলেও, মাত্র ৬% লন্ডনবাসী কোনো ঘটনার পরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকেছেন। তবে, গত ৩ মাসে ৩৪% মানুষ তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। TfL-এর নিরাপত্তা, পুলিশিং এবং প্রয়োগ বিভাগের পরিচালক সিওয়ান হেইওয়ার্ড বলেন: “লন্ডনের পরিবহন নেটওয়ার্কে অপরাধের ঝুঁকি সামগ্রিকভাবে কম।” “আমরা পুলিশের সঙ্গে কাজ করছি যাতে এটি এমনই থাকে এবং প্রত্যেকেই নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে।”
“ব্যক্তিগত সম্পত্তির চুরি এখনও আমাদের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্কে সবচেয়ে বেশি রিপোর্টকৃত অপরাধ, যা মোট অপরাধের প্রায় অর্ধেক চার্জ গঠন করে।” “চোরেরা ভিড়যুক্ত এলাকাগুলোকেই টার্গেট করে এবং আমাদের পরিবহন নেটওয়ার্কও এর ব্যতিক্রম নয়।” “আমরা পুলিশের সাথে যৌথভাবে গুরুতর সহিংসতা, যৌন অপরাধ, ডাকাতি এবং বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করছি।”
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে যদিও কিছু রুট অপরাধপ্রবণ তথাপি TfL এবং পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয় রয়েছে এবং তারা যাত্রীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।