আর মাত্র তিন দিন পরে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের টি-২০ বিশ্বকাপ। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের আসর বসছে তাসমান সাগর অস্ট্রেলিয়ায়। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে মোট ১৬টি দল। অস্ট্রেলিয়ার ৭টি শহরের ৭টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো। অ্যাডিলেড, ব্রিসবেন, জিলং, হোবার্ট, মেলবোর্ন, পার্থ ও সিডনির মাঠে ব্যাটে বলে মুনশিয়ানা দেখাবে বিশ্বের ১৬ দেশের ক্রিকেটাররা। ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৩ নভেম্বরের ফাইনাল পর্যন্ত ক্রিকেটীয় যুদ্ধে মেতে থাকবে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। টি-২০ বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের শিরোপা ঘরে তুলতে মাঠে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিবে ক্রিকেটাররা। এবারের বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে ১৬ অক্টোবর জিলংয়ের কার্ডিনিয়া পার্কে শ্রীলঙ্কা-নামিবিয়া ম্যাচ দিয়ে। আর আসরের পর্দা নামবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ১৩ নভেম্বরের ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে।
প্রায় মাসখানিকের জন্য যে ভেন্যুগুলোতে ক্রিকেটাররা ব্যাটে-বলে মুনশিয়ানা দেখাবে চলুন যেনে নেই সেই ভেন্যু ইতিহাস ও ঐতিহ্য :
কার্ডিনিয়া পার্ক, জিলং: অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের বন্দর নগরী জিলংয়ে অবস্থিত কার্ডিনিয়া পার্ক স্টেডিয়াম। স্থানীয়রা এটিকে সাইমন্ডস স্টেডিয়াম নামে ডাকে। প্রায় ২৬ হাজার ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়।
এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয় ১৯৪১ সালে। কার্ডিনিয়া পার্ক অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় আঞ্চলিক ভেন্যুগুলোর একটি। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের সবগুলো হবে এই স্টেডিয়ামে। মোট ৬টি ম্যাচের আয়োজক কার্ডিনিয়া পার্ক।
বেলেরিভ ওভাল, হোবার্ট: অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া অঙ্গরাজ্যের হোবার্টের পূর্ব উপকূল তীরবর্তী সিটি অব ক্ল্যারেন্সের বেলেরিভে অবস্থিত ‘বেলেরিভ ওভাল’ স্টেডিয়ামটি। এই স্টেডিয়ামটি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ১৯১৪ সালে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়দের কাছে এই মাঠটি ব্লান্ডস্টোন অ্যারিনা নামে পরিচিত। এটিই বর্তমানে তাসমানিয়া অঙ্গরাজ্যের একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা আয়োজন করা হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজার দর্শকের ধারণ ক্ষমতা এই স্টেডিয়ামের।
১৯৮৮ সালে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ মাঠে গড়ায় এই স্টেডিয়ামে। আর ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ দিয়ে টি-২০ ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় এই মাঠে। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ নয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে। যার মধ্যে গ্রুপ পর্বের ছয়টি ও সুপার টুয়েলভের তিনটি ম্যাচ রয়েছে। ২৪ অক্টোবর বেলেরিভ ওভালেই বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচ দিয়ে শুরু করবে এবারর বিশ্বকাপ অভিজান।
পার্থ স্টেডিয়াম, পার্থ: পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বার্সউড উপকূলে অবস্থিত পার্থ স্টেডিয়াম। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এই স্টেডিয়ামের কাজ সমাপ্ত হয় এবং ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। এই মাঠে ক্রিকেট ছাড়াও সকার, রাগবিসহ বিভিন্নধরনের কনসার্ট ও বিনোদমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনীর দিনেই আয়োজন হয় প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।
আর সেই বছরের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। আর এই মাঠে অনুষ্ঠিত একমাত্র টি-২০ ম্যাচ হয় ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচটিতে ১০ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পার্থ স্টেডিয়ামে।
অ্যাডিলেড ওভাল: অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহরের একটি বিখ্যাত মাঠ এই অ্যাডিলেড ওভাল। অ্যাডিলেড খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে পরিপূর্ণ একটি শহর। অ্যাডিলেড ওভাল স্টেডিয়াম নির্মাণ হয় ১৮৭১ সালে। এই স্টেডিয়ামে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার ডন ব্যাডম্যানের স্মৃতি জাদুঘর। ৫০ ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশর।
এই মাঠে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সেই টেস্টে ৮ উইকেটের জয় পায় ইংল্যান্ড। ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। আর প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ মাঠে গড়ায় ২০১১ সালে। এবারের বিশ্বকাপের একটি সেমিফাইনাল সহ মোট সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। এই মাঠে বাংলাদেশের রয়েছে দুটি ম্যাচ। ২ নভেম্বর ভারতের ও ৬ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
দ্য গাব্বা, ব্রিসবেন: অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশের ব্রিসবেন শহরে অবস্থিত ব্রিসবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৮৯৫ সালে প্রতষ্ঠিত হয় এই স্টেডিয়াম। দর্শক ধারণ ক্ষম প্রায় ৪২ হাজার। স্থানীয়দের কাছে দ্য গাব্বা নামে পরিচিত এই স্টেডিয়াম। অজিরা ঐতিহ্যগতভাবে গ্রীষ্মকালের প্রথম টেস্ট এই মাঠে আয়োজন করে।
আন্তর্জাতিক ছাড়াও ঘরোয়া লিগ শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠে। এই স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠে গড়ায় ১৯৩১ সালে। আর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। বাউন্সি উইকেটের জন্য বেশ সুখ্যাতি রয়েছে এই মাঠের। এবারের বিশ্বকাপের মোট চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ দলের ম্যাচ আছে এই মাঠে।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড: সিডনি ক্রিকেট গ্রাউড যা সংক্ষেপে এসসিজি নামে পরিচিত। এটি অস্টেলিয়ার ঐতিহ্যবাহী একটি স্টেডিয়াম। ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। দর্শক ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪৮ হাজার। এই স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল, রাগবির বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৮৮২ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে।
আর ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। আর ২০০৭ সালে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হয় এসসিজিতে। এবারের বিশ্বকাপে একটি সেমিফাইনালসহ মোট সাতটি ম্যাচ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। বাংলাদেশ দল এই মাঠে ২৭ অক্টোবর মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড: মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) বিশ্বের বড় স্টেডিয়ামগুলোর একটা। হাজারো ক্রিকেট ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ার মোলবোর্নের ইয়ারা পার্কে অবস্থিত। মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব ১৮৫৩ সালে এমসিজি প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে এই স্টেডিয়ামটি মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব দ্বারাই পরিচালিত হয়। এই স্টেডিয়ামে দর্শক ধারাণ ক্ষমতা প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার। ১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রধাণ স্টেডিয়াম ছিল এমসিজি।
এই মাঠে ১৮৭৭ সালে প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম ওয়ানডে মাঠে গড়ায় প্রায় ৯৬ বছর পর ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথম টি-২০ এই মাঠে গড়ায় ২০০৮ সালে ভারতের বিপক্ষে। দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের সাক্ষী এই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৯৯২ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিশ্বকাপ দিয়ে আরও একটি ফাইনালের সাক্ষী হবে এই মাঠ। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালসহ অনুষ্ঠিত হবে মোট সাতটি ম্যাচ।