ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনী ঝামেলা দিন দিন যতই বাড়তে থাকুক, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। অন্য সব মনোনয় নপ্রত্যাশীদের চেয়ে তিনি অনেক অনেক এগিয়ে। বরং বলা যায়, ফৌজদারি মামলাগুলোতে অভিযুক্ত হবার পর যেন তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। এর কারণ কী?
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত চার মাসে তিনটি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।
তা ছাড়া ট্রাম্প চতুর্থ আরেকটি মামলায় অভিযুক্ত হতে পারেন সেটি হল জর্জিয়ায়। এখানে অভিযাগ, ২০২০ সালের নির্বাচনে এখানে তার পরাজয়কে উল্টে দিতে তিনি রাজ্য কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবার জন্য ১৪ জন লড়াই করছেন। কিন্তু তাদের কারোর পক্ষেই, এমনকি ৬ শতাংশ জনসমর্থনও নেই। এদের অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী এমনকি ১% সমর্থনও পাননি। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিও চিত্রটা ছিল ভিন্ন।
তখন ট্রাম্প ও ডেসান্টিসের মধ্যে জনসমর্থনের পার্থক্য ছিল মাত্র দুই শতাংশ (যথাক্রমে ৪১% ও ৩৯%)। কিন্তু তার পর থেকে ফ্লোরিডার গভর্নরের সমর্থন ক্রমাগত নিচের দিকে নেমেছে।
কিন্তু ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন এখনো পাথরের মত শক্ত – এতটুক আঁচড় লাগেনি তাতে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত হলেন – তার পর থেকে বস্তুত তার পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যদিও ট্রাম্পই হলেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ।
তার প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে হাজিরা দেবার পর থেকে ট্রাম্পই পরিণত হয়েছেন রিপাবলিকান ভোটারদের প্রথম পছন্দে।
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা’ – মনে করেন রিপাবলিকান ভোটাররা
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে যে একাত্মতাবোধ তা ভাঙা কঠিন হবে মনে করেন ক্লিফোর্ড ইয়ং, যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা।
রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫%-ই ট্রাম্প সমর্থক এবং ইয়ং বলছেন, তারা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়াকে দেখে।
“তারা বিশ্বাস করে ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
গোপন দলিলপত্র নিজের কাছে রাখার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে মামলা তা নিয়ে বিবিসি কিছু রিপাবলিকান ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছে এবং একই রকম মতামত পেয়েছে।
আরিজোনার ৬১ বছর বয়সী ট্রাম্পের এক সমর্থক বলেন, এটা হচ্ছে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না দেবার এক নির্লজ্জ চেষ্টা।
এমনকি লুক গর্ডনের মত ট্রাম্প সমর্থক নন এমন রিপাবলিকানও এসব অভিযোগকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তিনি বলেন, তিনি দাবির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করছেন না বা ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন না কিন্তু এসব মামলা-তদন্তের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বলে তার ধারণা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির অংশীদার হচ্ছে সিবিএস নিউজ। তাদের জুন মাসের এক জনমত জরিপে দেখা যায় এর উদাহরণ:
* রিপাবলিকানদের ভোট দিতে পারেন এমন ৭৬ শতাংশ ভোটার বলেছেন, গোপন দলিলপত্র মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
* এই ভোটারদের ৩৮ শতাংশ মনে করেন মি. ট্রাম্প মেয়াদ শেষ হবার পর পারমাণবিক বা সামরিক দলিলপত্র রেখে দিলে তা জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আর দলীয় বৃত্তের বাইরে আমেরিকান জনগণের মধ্যে এমন ধারণা পোষণ করেন ৮০ শতাংশ লোক।
* রিপাবলিকান ভোটারদের ৬১ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্প অভিযুক্ত হওয়ার পরও তার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলায়নি। ১৪% বলেছেন তারা এখন ট্রাম্পকে আরো বেশি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
“আসলে এটা হচ্ছে যেন দুটি আমেরিকা -দুটি জগৎ। একদল ট্রাম্পের আচরণকে আইনবহির্ভূত মনে করছেন, আরেক দল ট্রাম্পকে তাদেরই প্রতিনিধি মনে করেন এবং তাদের মত ঠিক এ কারণেই তার ওপর এত আক্রমণ হচ্ছে।”
মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কি ট্রাম্পের সমর্থন কমেছে?
ট্রাম্প তৃতীয় বা এমনকি চতুর্থ মামলায় অভিযুক্ত হলেও রিপাবলিকান প্রার্থিতার প্রতিযোগিতায় তেমন কোন প্রভাব পড়বে বলে এখনো মনে হচ্ছে না। মার্চ মাসে সিএনএনএর এক জরিপে দেখা যায়, রিপাবলিকানদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই মনে করেন যে জো বাইডেন আইনসিদ্ধভাবে ২০২০-এর নির্বাচন জেতেননি। তাই ওই নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করার অভিযোগ রিপাবলিকানদের মধ্যে তেমন কোন আলোড়ন সৃষ্টি করবে না।
এটা ট্রাম্পের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বিদের জন্য গুরুতর সমস্যার কারণ।
এই প্রার্থীরা এসব মামলার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করতেও চাইছেন না। তারা সচেতন যে এতে তাদের নিজেদের সমর্থকরা বিগড়ে যেতে পারে। আবার একারণেই ‘কেন ভোটাররা ট্রাম্পের পরিবর্তে অন্যদের বেছে নেবেন’ – সে যুক্তি তুলে ধরতেও সমস্যায় পড়ছেন তারা।
আগামী বছর হয়তো এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে যে- এসব মামলার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনার ফলে রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনে কোনো পরিবর্তন হয় কি না।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেওয়া এ দুটিই সামাল দিতে হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়াবেন না।
মার্কিন রাজনীতিতে তখন এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইয়ংএর মতে – তখন এটাই হবে দেখার বিষয় যে ট্রাম্পের ‘জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা’ আর ‘ইলেক্টেবিলিটি অর্থাৎ ভোট পাবার উপযুক্ত হওয়া’ – এ দুই সূচকে কোন পরিবর্তন হয় কি না।
আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছাকাছিই আছেন।
সাম্প্রতিক ইকনমিস্ট-ইউগভের জরিপে দেখা যায়, বাইডেন ৪৪%-৪০% ব্যবধানে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। আর মর্নিং কনসাল্টের আরেক জরিপে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৪৩%-৪১% অর্থাৎ মাত্র দুই পয়েন্ট ব্যবধানে।
তাতে আভাস পাওয়া যায় যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আগের দুবারের মতোই জয়পরাজয় নির্ধারিত হবে খুব সামান্য ব্যবধানে।