সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে ঢাকা সফরে আসবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। মস্কোর ইতিহাসের প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে আসবেন ল্যাভরভ। অপরদিকে ৩৩ বছর পর কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট আসবেন ঢাকায়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বলা হয়েছে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর আসবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো।
ভারতের আয়োজনে জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি সফর করবেন বিশ্বনেতারা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টও অংশ নেবেন এতে। এর ফাঁকেই তারা ঢাকা সফর করবেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি যাবেন ৮ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ব্রিকস সম্মেলন শেষে জোহানেসবার্গ থেকে ফিরেছেন। এরপরই ঢাকা সফরে আসছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমারা চলতি বছরের এপ্রিল থেকেই সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করে আসছে। এমনকি নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি রোসাটমের অধীনে রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান। কেন্দ্রটি পরিদর্শন করার কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। ধারণা করা হচ্ছে এর ফলে হয়তো দ্রুতই কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শেষ হতে পারে।
শেখ হাসিনা এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ ২০২২ সালের অক্টোবরে নির্মাণস্থলে চুল্লী স্থাপনের চূড়ান্ত পর্যায়ের সূচনা করেন। রোসাটমের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছিল কমপক্ষে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চুক্তি। মোট পরিমাণের মধ্যে রাশিয়া প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে বলে জানা যায়। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ায় ঋণ পরিশোধে কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ল্যাভরভ সম্ভবত তৃতীয় কোনো মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। কেননা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক অংশীদার দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে লেনদেন করতে পারছে না। সম্প্রতি ভারতীয় তেল আমদানিকারকা মস্কোকে চীনের ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করেছে।
তাই ঢাকায় ল্যাভরভের আলোচনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কারণ এখানে আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে। ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক শেষেই দিল্লি রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর আমন্ত্রণে প্যারিস সফরে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে। তখন থেকেই উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সম্প্রসারণের বিষয় আলোচনায় রেখেছে।
ঢাকার সঙ্গে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৭’শ শতাব্দিতের দেশটির সঙ্গে ঢাকার বাণিজ্য ছিল। এমনকি প্রথম কোনো পশ্চিমা দেশ হিসেবে ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ফ্রান্স। দেশটি ক্রমবর্ধমানভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে তার কৌশলগত অবস্থানকে পুনর্নির্মাণ করেছে এবং ঢাকার সঙ্গেও সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ম্যাক্রোর সফরটি প্রধানমন্ত্রীর জন্য সুবর্ণ সুযোগ ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সম্পর্কে আলোচনা করার। ঢাকা সফরকারী শেষ ফরাসি রাষ্ট্রপতি ছিলেন ১৯৯০ সালে ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ড।