শীতের হাওয়া হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে। প্রায় পুরো বাংলাদেশ জুড়েই এখন কম-বেশী শীতের দাপট। আট জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীবাসী দু’দিন পর গতকাল দুপুর পৌনে ১ টার দিকে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা পেয়েছেন। গতকাল কুয়াশা কমলেও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ তরিফূল নেওয়াজ কবির বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে শীত কমতে পারে সামান্যই। তবে ৮ ডিসেম্বরের পরে রাতের তাপমাত্রার পারদ আরো নেমে যাবে। দিনের তাপমাত্রা কিঞ্চিত্ বাড়তে পারে। তখন কনকনে ঠাণ্ডায় শীতের তীব্রতা অনুভব করবে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আজ শুক্রবার ঢাকা শহরে শীতের প্রকোপ বাড়বে। একই সময়ে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোত রাতে হালকা কুয়াশা ও সকালে প্রচন্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হামিদ মিয়া জানান, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগের দিনের চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। ঢাকায় বুধবার তাপমাত্রা ছিল ১৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আরও ২-১ দিন সারা দেশে এমন তীব্র ঠাণ্ডা থাকবে। তারপর তাপমাত্রা একটু বাড়বে। এরপর আবারো কমবে। কিছু দিনের জন্য তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০ জানুয়ারির পরে নতুন আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বর্তমানে দেশের কয়েকটি এলাকা শৈত্যপ্রবাহভুক্ত হলেও আগামী কয়েকদিনে এ হাড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। কেননা বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের কারণে জলীয় বাষ্প দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমদিক থেকে লঘুচাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর তেমনটি হলে শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে। রাতের তাপমাত্রা ৯-১৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। এর ফলে সারা মাসে ঠাণ্ডা থাকবে। তবে শীতের তীব্রতা কমতে থাকবে। রাজশাহী,পাবনা, দিনাজপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গায় আরও ২-৩ দিন শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, রাজধানী ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মূলত ঠাণ্ডাটা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এমনকি হিমেল হাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ঠাণ্ডাটা আরও তীব্রভাবে বেড়েছে।
এদিকে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট ওঠা-নামায় গতকালও বিঘ্নিত হয়েছে। পাটুরিয়ায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল। রাতেই ঘাটে আটকা পড়ে ছোট বড় বহু যানবাহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল ৭টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। কুয়াশা কেটে গেলে সকাল সাড়ে ৮টায় ফেরি চলাচল শুরু হয়। অন্যদিকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে কুয়াশা পড়লেও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে তিনি জানান।