ফরিদ সুমন :-
বাংলাদেশে এখন কোটি কোটি মানুষ মৌলিক চাহিদা পুরন করতে জীবনপাত করছে, নিজের সর্বশক্তি বিনিয়োগ করেও তাদের জীবনযাপনের জন্য সর্বনিন্ম চাহিদা মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের যা দরকার তা সব কুক্ষীগত হয়ে আছে এক ব্লাকহোলে, যার নিয়ন্ত্রণ ধনবানদের হাতে! আর সেই ব্লাকহোলের নাগাল পাওয়াতো পরের কথা চোখে দেখতে পাওয়াও তাদের পক্ষে অসম্ভব।
এই ব্লাকহোলের উপরে ব্রিজ হিসাবে কাজ করার কথা রাজনীতিবিদদের কিন্তু তারা কী সে দায়ীত্ব পালন করছে? করছে না, উলটা সেই ধনিক শ্রেণীই এখন অর্থের সাথে রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ করছে। আগে রাজনীতিবিদদের ধরা হইতো মধ্যস্থতাকারীর দলে, কিন্তু এখন আর রাজনীতি সমাজ সেবা নয় এটা এখন ব্যবসা। তাই এখানে এখন টাকা লগনি করতে হয় তাই উচ্চবিত্তের হাতে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চিলে গিয়েছে, ফলে যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে।
আগে সম্পদ অর্জন করত বণিকরা আর সে সম্পদ বন্টনের ব্যাবস্তা করত রাজনীতিকরা। এখন সম্পদের সাথে রাজনীতি ও ক্ষমতাও এক স্থানে তামাদী হয়েছে! এখন এই কস্তুরী তাদের থেকে গরিবদের কাছে কে নিয়ে যাবে? আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থা তেমন দৃঢ়চেতা চরিত্র জন্মাতে দিবে না যে প্রবল শক্তিতে ধনীক শ্রেনীকে বাধা দিবে। তাই এই দেশে এখন একজন প্রথা-বিরোধী রবিনহুডের দরকার, যিনি ভয়ংকর গতিসম্পন্ন এক সুনামীর আঘাতে ভেঙ্গেচুরে চলতি সমাজকে ভাসিয়ে দিবে!
যে দেশে গণতন্ত্রের নামে একজনের ইচ্ছাতেই দেশ চলে সেই দেশে গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে এতো সম্পদ ক্ষতি করা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না, অথবা তাদের কাছে দেশের কোন মূল্য নাই তাদের দরকার লুটে খাওয়ার অধিকার! তা যতক্ষণ না পাবে ততক্ষণ ধ্বংস-কর্ম চলবে!
এই দেশে এখন ভোটের অধিকার না, জীবন-ধারণের পাথেয় দরকার। সেই অধিকার নিয়ে আন্দোলন করলেই বলা যাবে এটা মানুষের জন্য আন্দোলন। সে আন্দোলনে ভাংচুর থাকবে না, থাকবে না জবরদস্তি, মানুষই আন্দোলন সাকসেস করবে। এখনতো মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করবে এমন নেতা নাই। আছে নিজের হিসাব বুঝে নেয়ার নেতা, তাইতো কোন আন্দোলনেই আর গণমানুষ রাজপথে নামে না।
এই দেশে দুই রকম রাজনীতিক। এক দল ক্ষমতায় বসে টাকা পাচারে আকণ্ঠ ডুবে আছে, আর এক দিকে এক দল রাজনীতিক আছে যারা সেই টাকার নাগাল পাচ্ছে না বলে তারা গণতন্ত্র, গণতন্ত্র বলে খাবি খাচ্ছে । সেই ফাকে সরকারের কর্মচারীরাও দুই হাতে লুটেপুটে খাচ্ছে একেবারে হরির-লুটের বাতাসা মনে করে।
অসৎ রাজনীতিকদের দূর্বল নৈতিকতার সুযোগে আমলারাও লুট-পাটে যুক্ত হয়ে দেশটাকে একেবারে ছিবড়ে করে বেগম পাড়ায় রূপের হাট বসিয়েছে! এদিকে জনগনের দেয়া ট্যাক্সের টাকায় তারা হরির-লুট করে বেড়াচ্ছে আর দেশের বাকি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে লুটোপুটি খাচ্ছে!
এখন আর মানুষ ভোট দেয় না, ভোট বিক্রি করে। তারা ৫বছরে একবার ভোট বণীক হয়ে যায়, আর এই ভোট বানিজ্যের গোলোকধাঁধায় ভর করে বিজয়ী প্রার্থী একেকজন দানব হয়ে যায়। সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধিরা তৃনমূলে টাকার সাথে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ায় আর আইন প্রণেতারা নিজের ব্যবসায় ব্যাস্ত থাকে কারণ তাদেরতো আর আইন প্রণয়নের কোন কাজে লাগে না, ওটাতো প্রধানমন্ত্রী একাই করে দিচ্ছেন। অথচ এই সাক্ষীগোপালরা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সরকারের কৃতদাস ও জনগনের সামনে জমের চরিত্রে আবির্ভূত হয়।
বিরোধী দল আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাস্তায় তান্ডব চালায় আর সরকার সন্ধ্যায় একটা বিবৃতি দেয় আজ সারা দিনে দেশের শত্রুরা এই এই ধ্বংস করেছে! বলি, সরকারের কাজ কী বিবৃতি দেয়া নাকি সে সব ধ্বংসাত্বক কাজ যাতে না করতে পারা তা নিশ্চিত করা? সরকার তা না করে মনে করছে বিরোধীদের দেশ ধ্বংসের ফিরিস্তি দিয়েই জনগনকে নিজেদের ব্লকে টেনে নিবে? এটা একেবারেই ভুল থিউরি।
দেশতো চালায় সরকার সেখানে কোন রকম অপকর্মের দায় তারা এড়াতে পারে না। সরকার এখন যা করছে তা একেবারেই অসহায় শিশুদের মত মার খেয়ে বাবা-মাকে বিচার দিয়েই মনে করে সে এবার নিরাপদ!
আমাদের সরকারেরও সেই অবস্থা। বিরোধীরা ভাংচুড় করে বাস, ট্রেন মানুষ সহ পুড়িয়ে কিমা বানিয়ে দিচ্ছে আর সরকার বিবৃতির মাধ্যমে জনগনের কাছে এর বিচারের ভার দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ হয়েছে মনে করে। সন্ত্রাসীরা যদি যা ইচ্ছে তাই করতে পারে তবে সরকার থাকার দরকার কী?