গত ২ আগস্ট রাতে হঠাৎই নিজের অফিশিয়াল ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সাকিব আল হাসান। ‘বেটউইনার নিউজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা দূত হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মুহূর্তেই হুহু করে ক্রিকেট পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। আজানা কোম্পানি ‘বেটউইনার’ নিয়ে আঁতশিকাঁচ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমগুলো। যা পাওয়া যায় তাতে চক্ষু ছানাবড়া। বেটউইনার একটি অনলাইন বেটিং ও ক্যাসিনোর ওয়েবসাইট! বাংলাদেশের প্রচলিত আইন কিংবা ক্রিকেট নীতি কোনোটিই একজন ক্রিকেটারকে সমর্থন দেয়া এমন একটি কোম্পানির কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকাকে। বিসিবিও অবাক। তাদের মনেও প্রশ্ন, না জানিয়ে এমন একটি সংস্থার শুভেচ্ছাদূত কি করে হলেন সাকিব!
উত্তর খুঁজতে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় হার্ডলাইনে যায় বিসিবি। গতকাল দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন হুঁশিয়ারি করেন, ‘হয় ক্রিকেট নইলে বেটিং’ দুটোর একটি বেছে নিতে হবে সাকিবকে। তার বিতর্কিত চুক্তিতে বিসিবির নেওয়া কঠোর অবস্থানের পর অবশেষে বাস্তবতা বুঝতে পেরেছেন তিনি। বেটউইনার নিউজ পোর্টালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার কথা চিঠি দিয়ে বিসিবিকে জানিয়েছেন সাকিব। চুক্তির পর যেসব সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দিয়েছিলেন সাকিব, সেসবও তিই সরিয়ে নিবেন বলে চিঠিতে লিখেছেন এই তারকা।
অনলাইন বেটিং সাইট বেটউইনারের সারোগেট ব্র্যান্ড বেটউইনার নিউজের সঙ্গে মোটা অঙ্কের চুক্তি করেছিলেন সাকিব। চুক্তির খবর নিজেই তার স্বীকৃত পাতায় জানিয়েছিলেন তিনি। এই চুক্তির খবর জানত না বিসিবি। কেন্দ্রীয় চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবে যেকোনো পণ্যের দূত হতে গেলে বিসিবির অনুমোদন প্রয়োজন। সাকিব নেননি তাও। ঘটনা জানার পর নিজেদের কঠোর অবস্থান জানান দেয় বিসিবি। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, কোনভাবেই এই ধরণের চুক্তি মেনে নেবেন না তারা। গতকাল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানান, সাকিব চুক্তি থেকে সরে এসেছেন। তিনি বিসিবির কাছে লিখিত দিয়ে এই চুক্তি বাতিল করার কথা জানিয়েছেন। গতকাল নিজের কর্মস্থলে গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে সভার পর তিনি জানান, ‘সাকিব এই চুক্তি থেকে সরে না এলে তার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে।’
দেশের প্রচলিত আইনে জুয়া নিষিদ্ধ থাকায় এরকম চুক্তি অনুমোদনের কোন সুযোগ না থাকার কথা জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে বিসিবি। সাকিবকেই বাস্তবতা মেনে সরে যেতে হচ্ছে বিতর্কিত চুক্তি থেকে। সাকিব অবশ্য এই চুক্তি থেকে সরে আসতে চাননি। তার যুক্তি ছিল সরাসরি বেটিং সাইট নয়, বেটিং সাইটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন তিনি। তবে বিসিবি সেই যুক্তি মেনে না নিয়ে যায় কঠোর অবস্থানে। কিন্তু চুক্তির পর থেকে মাঝের দশ দিনে পানি গড়িয়েছে অনেক দূর। সাকিবকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়ে তারা বেটউইনারের যে প্রচার চেয়েছিল, তা তারা পেয়ে গেছে। সাকিবেরও কাজ হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। সাকিবের চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, অর্থযোগ সাকিবের যথেষ্টই হওয়ার কথা। যতটুকু জানা গেছে দুই পক্ষের চুক্তির আর্থিক পরিমাণ ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা!
সাকিবের চিঠি পেয়েও অবশ্য বিসিবি পুরো সন্তুষ্ট হয়নি। বিসিবি সভাপতির কথাতে সেটিরই আভাস, ‘সাকিবের চিঠি পাওয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন, আজই (গতকাল) এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করে দিতে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। সাকিব ১২ তারিখ (আজ) রাতে দেশে ফিরবে। ১৩ তারিখ (আগামীকাল) সকালে আমি ওর সঙ্গে বসব। সব জেনেশুনে ও কেন এমন একটা কাজ করল, এর ব্যাখ্যা অবশ্যই ওকে দিতে হবে। টেলিফোনে তো আর এত কথা বলা যায় না। আমি তাই ওর সঙ্গে সামনাসামনি বসে কথা বলার অপেক্ষায় আছি। এরপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেব।’
আগামীকালই এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করবে বিসিবি। সাকিবের যুক্তির উপরই নির্ভর করছে অধিনায়ক নির্বাচন। বিশ্বকাপের বছরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আগামী ২৭ আগস্ট আরব আমিরাতে হবে এবারের এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ৩০ আগস্ট আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের মিশন।