বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেলেও সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে নানা অসাধু প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিচ্ছে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি। এসব এজেন্সি তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ সরকার থেকে ছাড়পত্র নিয়ে কর্মী প্রেরণ অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে যে কোনো সময় দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে এ কাজে চারটি প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা গেছে। তারা তথ্য গোপনের মাধ্যমে দেশটিতে ১ লাখ কর্মী পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণকারী ট্রেনিং সেন্টার ওয়েলটেক ট্রেনিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করে সিঙ্গাপুরের বিল্ডিং কন্সট্রাকশন অথরিটি(বিসিএ)। এর ধারবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঢাকার আশুলিয়ায় স্থাপিত এ সেন্টারটি বিধিবহির্ভূতভাবে পরিচালনার জন্য তাদের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) বাতিল করে। এ ট্রেনিং সেন্টারে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। অভিযোগে বলা হয়, ওয়েলটেক টেস্ট সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের চারটি রিক্রুটিং এজেন্সি সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠাত। এরা হচ্ছে-গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল জেনেট ওভারসীজ প্রাইভেট লিমিটেড, আর এক্স কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়েলটেক এমপ্লয়েমেন্ট সার্ভিসেস। কিন্তু ওয়েলটেক টেস্ট সেন্টারের এনওসি বাতিল হওয়ায় ঐ চারটি রিক্রুটিং এজেন্সির সেন্ডিং অর্গানাইজেশন (এসও) বাতিল হিসেবে পরিগণিত হয়। মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে ঐ চারটি রিক্রুটিং এজেন্সি ওয়েলটেক ট্রেনিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিলের তথ্যটি গোপন করেছে। ইতিমধ্যে তারা ১ লাখেরও বেশি কর্মী পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। তথ্য গোপন করে বিদেশে কর্মী প্রেরণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এদিকে, মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ফেরদৌস আহমেদ বাদলের সঙ্গে পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, অভিযোগ যেহেতু মন্ত্রণালয়ে সেহেতু মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন। তবে এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে এর আগে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রপ্তানির অভিযোগ উঠেছে দেশের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে। বিষয়টি গোচরে আসায় ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের জন্য ঐ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত না হলেও ওয়েসিস সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানটি ৩ হাজারেরও বেশি ইতিমধ্যে পাঠিয়েছে। বিএমইটির পক্ষ থেকে ওয়েসিসের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হুদা মেহেদিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, মেসার্স ওয়েসিস ওভারসীজ সার্ভিসেসকে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণে সেন্ডিং অর্গানাইজেশনের (এসও) তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জামানতের ৩০ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তালিকা থেকে বাদ পড়ার পরও তথ্য গোপন করে ওয়েসিস সিঙ্গাপুরে ৩ হাজার ৩৭ জন কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ করে। এটি বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স ও আচরণ) বিধিমালা ২০১৯ এবং বৈদেশিক কর্মস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩-এর পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের জন্য একটি আকর্ষণীয় শ্রমবাজার। বর্তমানে দেশটিতে ৬৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন। দেশটিতে কর্মীরা ভালো বেতনও পান। শুরুর দিকে সে খাতে এক জন কর্মীর প্রারম্ভিক বেতন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভালো এই বাজারটিকে ধরে রাখতে হলে তথ্য গোপন করে যেসব রিক্রটিং এজেন্সি কর্মী পাঠিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।