তিস্তা নদী নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। সেটা নিয়ে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। দীর্ঘ ১২ বছর পর বাংলাদেশ–ভারতের ৩৮ তম মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি—মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব এমওইউটা স্বাক্ষর হোক। আমি ভারতের জলশক্তি মন্ত্রীকে বলেছি এ ব্যাপারে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী যখন ভারতে যাবেন তখন এমওইউ সাক্ষর সম্ভব কিনা, সে ব্যাপারেও বলেছি। জলশক্তি মন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করবেন।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, দীর্ঘ ১২ বছর পর জেআরসি বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আশাবাদী, ১২ বছরের যে একটা স্টল মেট ছিল সেটা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। ভবিষ্যতে প্রতিবছরই এ ধরনের বৈঠক হবে। এটি আমাকে ভারতের জলশক্তি মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।’
জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আমরা ভারতে গিয়েছিলাম অনেক আশা নিয়ে। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ পানির দেশের লোক, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের সঙ্গে ভারতের ৫৪টি নদী আছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ছিল সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
জাহিদ ফারুক আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমাদের কুশিয়ারা নদীতে ১৫২ কিউসেক পানি পাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ, সেখানে আমাদের ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। যার জন্য আমরা পাম্প হাউস করেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ ৪ / ৫ বছর ধরে ভারত পানি দিচ্ছিল না, আটকিয়ে রেখেছিল। সেটার ব্যাপারে আলোচনা করেছি। সেই এমওইউ দেওয়া হয়েছে। সেটা তাদের ক্যাবিনেটে এপ্রুভের জন্য পাঠিয়েছে। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এটা দস্তখত হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ছাড়াও আমরা গঙ্গার পানির ব্যাপারে বলেছি। আমাদের যে হিস্যা দেওয়া হয়, সেটা যেন আমরা আরও বেশি করে ব্যবহার করতে পারি সেটার ব্যাপারেও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে দুই দেশের টেকনিক্যাল টিম একত্রিত হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের ৬টি নদীর উজান থেকে কোনো ডাইভারশন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও আমরা জানতে চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের এখনো তথ্য দেয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ সংবাদগুলো আমাদের দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আশা করতে পারি, এই ৬টা নদীর ব্যাপারে এমওইউ হবে। সেই সঙ্গে নদীর পানির হিস্যা আমরা বণ্টন করতে পারব। এসব নদীর সঙ্গে আরও ৮টি নদীর ব্যাপারে স্টাডির জন্য বলেছি। তখন তাঁরা বলেছে, টেকনিক্যাল কমিটিতে যারা আছে, তাঁরা এটার ব্যাপারে বসে আলোচনা করবে। তাদের আলোচনার পর পরবর্তী মিটিংয়ে আমরা আলোচনা করব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি রিপোর্ট ছিল, ভারতের একটি নদীর সঙ্গে আরেকটি নদীর ইন্টারলিংক রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা তাদের বলেছি, হিমালয় থেকে যেসব নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয় সেই নদীগুলো আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে তাঁরা ইন্টারলিংক করতে পারবে না। সেই বিষয়েও তাঁরা রাজি হয়েছে।’
এর আগে, দিল্লির সুষমা স্বরাজ ভবনে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৩৮ তম মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে ভারতের জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন জলসম্পদ সচিব পঙ্কজ কুমার।
জানা গেছে, অনুষ্ঠিত বৈঠকে অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া কাঠামো প্রস্তুতির জন্য আরও কিছু অভিন্ন নদীর ডেটা ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়া বৈঠকে দুই দেশের অভিন্ন নদনদী বিশেষ করে গঙ্গা, তিস্তা, মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার এবং কুশিয়ারা সংক্রান্ত সব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বন্যা সংক্রান্ত তথ্য ও তথ্যের আদান-প্রদান, নদীর তীর রক্ষার কাজ, সাধারণ অববাহিকা ব্যবস্থাপনা এবং ভারতীয় নদী আন্তসংযোগ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।