ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সম্পৃক্ততার জন্য প্রায় ১ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তারক্ষীদের হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ ‘নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তেহরানের প্রধান কৌঁসুলি এবং বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি ইজেই এ সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। এদিকে ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে বিচার করা হবে।
ইরানে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেড় মাস ধরে তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভকারীদের ওপর ধরপাকড় অভিযান চালায় ইরানি কর্তৃপক্ষ। যদিও দেশ জুড়ে এখন পর্যন্ত কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ সংখ্যা ১৪ হাজার।
সোমবার ইরানের বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি ইজেই বলেন, শুধু তেহরানেই ১ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তাদের বিচার শুরু হবে। তিনি আরো বলেছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো দ্রুত ও যথার্থতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। বিচার বিভাগের প্রধানের বরাত দিয়ে দেশটির আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ সোমবার জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে যেসব বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১ হাজার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলার দায়ে এসব অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে বিচার করা হবে। ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুই কিশোর বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা চলার মধ্যে এ ঘোষণা এল। অভিযোগ উঠেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এ দুই কিশোর নিহত হয়েছে। সোমবার তাদের দাফন করা হয়।
কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাউ বলছে, পিরানশাহর শহরে বিক্ষোভ চলার সময় ১৬ বছর বয়সি কিশোর কুমার দারোফতাতেহকে কাছ থেকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিত্সারত অবস্থায় রবিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। সোমবার তার জানাজায় অংশগ্রহণকারী শোকাহত মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। ১৬ বছর বয়সি কিশোরী সারিনা সায়েদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সানন্দাজে দাফন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলা হয়, কয়েক দিন আগে বিক্ষোভ চলার সময় নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিল সারিনা। পরে সারিনার বাবাকে দিয়ে জোর করে টিভিতে বলানো হয়েছে যে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ইরানের মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএএনএ বলছে, চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ২৮৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ জন শিশু। এছাড়া বিক্ষোভ চলার সময় নিরাপত্তাবাহিনীর ৩৫ সদস্যও নিহত হন।