নানা প্রতিকুলতা ও আর দারিদ্র দমিয়ে রাখতে পারেনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হেয়াতপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির কিশোরী সম্ভাবনাময় নারী ফুটবলার কাকুলী সরেনকে । তিনি ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা (অনূর্ধ্ব-১৭) ফুটবল টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ট খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। টুর্নামেন্টে তিনি রংপুর বিভাগের হয়ে খেলেন।
এখন তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে একের পর এক সাফল্য ছিনিয়ে আনছেন। এলাকাবাসী বলছেন পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে কাকুলী হতে পারে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল তারকা।
কাকুলী বলেন, বাড়ী সংলগ্ন দাউদনগর শেডবোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী তিনি। ঐ বিদ্যালয়ের ছোট্ট মাঠে তার ফুটবল খেলার যাত্রা শুরু হয়। মেয়ে হওয়ায় প্রথমে তাকে খেলতে নিতো না বিদ্যালয়ের ছেলে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তার ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখে এক পর্যায়ে ছেলেদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু বাধ সাধে সমাজ। মেয়ে মানুষের আবার কিসের ফুটবল খেলা। অভাব অনটন ও সামাজিক বাধায় ফিকে হয়ে উঠে কাকুলীর ফুটবল খেলার স্বপ্ন। ঠিক সে সময় স্থানীয় দাউদপুর ফুটবল একাডেমী তার পাশে এসে দাড়ায়। উৎসাহ দেন, করান কোচিং। সুযোগ করে দেন বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার। এখন তার স্বপ্ন সুযোগ পেলে জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের সুনাম বয়ে আনা।
দাউদপুর ফুটবল একাডেমীর কোচ কবীর হোসেন বলেন, ২০২২ সালে উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে তার ক্রীড়া নৈপুন্যের স্বাক্ষর রাখেন কাকুলী সরেন। উপজেলার হয়ে খেলতে যান জেলা পর্যায়ে। সেখানে ভাল খেলে নজরে আসেন জেলা ফুটবল দলের। এরপর জেলা নারী ফুটবল দলের হয়ে খেলা শুরু করেন। অল্প সময়ে মধ্যে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে কাকুলীর ফুটবল খেলার।
বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অতিথি খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার অর্জন করে যাচ্ছেন তিনি। সবশেষ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা (অনূর্ধ্ব-১৭) ফুটবল টুর্নামেন্টে জেলা, বিভাগে ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে।
কাকুলীর গ্রামের এনজিও কর্মী পাতরাস মুর্মু বলেন, কাকুলীর বাবা, কাকুলীর মা দরিদ্র কৃষি শ্রমিক। সামান্য আয়ে কোনমতে চলে তাদের সংসার। একটি মাটির জীর্ণ ঘরে বাবা মাকে নিয়ে থাকেন সম্ভাবনাময়ী এই নারী ফুটবলার। একজন খেলোয়াড় হিসেবে যে খাবার ও যে থাকার পরিবেশ প্রয়োজন তার কোনটিই নেই কাকুলী সরেনের। তার পরেও থেমে নেই কাকুলী সরেন।
তিনি দাবি করেন, পৃষ্টপোষকতা, বসবাসের পরিবেশ ও সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করা হলে অপার সম্ভাবনাময়ী এই খেলোয়াড় দেশের একজন শীর্ষ তারকা ফুুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কাকুলী এলাকার গর্ব। তিনি জাতীয় পর্যায়ে সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে উপজেলার সুনাম বয়ে এনেছে। তার খেলা অব্যহত রাখার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তিনি ফুটবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্ভাবনাময় ফুটবলার কাকুলী সরেনের পাশে থাকার জন্য আহ্বানও জানান।