দায়হীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কবে হবে বোধোদয়? তাদের দায়সারা কাণ্ডে যমদূত দেখে ফিরলো ক্রিকেটাররা। সেই ভয়াবহ ক্রাইস্টচার্চ যেন ভিন্নরূপে সেন্ট লুসিয়ায় ফিরে এলো! দেব চৌধুরীর ভাষায় ‘দৃশ্যটা বাংলাদেশ টাইটানিকের।’ যা পরিচালনা করেছে স্বয়ং বিসিবি। রাতে যখন পরম শান্তিতে গভীর ঘুমে বিভোর বিসিবি কর্তারা, তখন জীবন মরণের কঠিন খেলায় মত্ত ক্রিকেটাররা! খেলোয়ারদের প্রতি যদি এমনই হয় ৯০০ কোটি টাকার বিসিবি’ র এমন আচরণ, তবে আর কিইবা বলার থাকে!
প্রভুর কাছে কৃতজ্ঞতা। অন্তত বেঁচে ফিরেছেন টাইগাররা। পাগলাটে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা যাওয়ার কথা ছিল ফেরিতে, যা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া মেনে নেয় বিসিবি! অথচ আগের দিন সাইক্লোন হয় সেখানে, সাগরে ছিল নিম্নচাপ। ছিল বিশাল ঢেউ। যেই সময় সাগরে নামা মানে সৃষ্টিকর্তার দিকে শুধু চেয়ে থাকা। আর তা যখন এমন অনভিজ্ঞ অবস্থায়, তখন চোখ বুঝে সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা আদায় ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আল্লাহ তাদের ফিরিয়ে এনেছেন।
ঢেউয়ের চাপ এতো বেশি ছিল যে ক্রিকেটাররা বমি করে পরিবেশ ভারী করে ফেলেছিল। কেউ কেউ বসে থাকার শক্তিটাও পায়নি, অধিকাংশই শুয়ে গিয়েছিল ডেকে। চোখ বন্ধ করে শুধু একবার ভাবুন, আপনিও আছেন সেই অবস্থাতে। নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না, প্রতিটি ঢেউ যেন মৃত্যু হয়ে আসছে। অসুস্থতার পাশাপাশি কেউ মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। লাজ-লজ্জা দূরে ঠেলে কেউ কেউ কেঁদেও ওঠেন।
কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হলে একটু যাত্রা বিরতি পেয়েই ক্লান্ত, বিষন্ন, ভয়ার্ত ক্রিকেটাররা কোনো রকমে টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবালের কাছে গিয়ে বলেন, আর ফেরিতে উঠতে চান না তারা। প্রয়োজনে এখানে থেকে যেতে চান! সেই সাথে কেউ ভয়ার্ত কন্ঠে কান্নার সুরে, কেউ বা অভিযোগের ক্ষিপ্ত সুরে বিসিবি’র প্রতি প্রশ্ন তুলে। তাদের বুঝেই আসছে না কিভাবে কোনো যাচাই-বাছাই না করে এমন করে বাঘের মুখে ঠেলে দিতে পারলো বিসিবি!
আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় ৪ ঘণ্টার সফর ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মাত্র দেড় ঘণ্টাতেই মৃত্যু দেখে ফিরেছে ক্রিকেটাররা। জীবন মরণ সন্ধিক্ষণ হয়তো এই সময়টাকেই বলে। ফলে বাকী আড়াই ঘণ্টার সমুদ্রপথ যাত্রা আর করতে চাইছে না ক্রিকেটাররা। তারা অন্তত জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে চায়। আমি লিখতে গিয়েও দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে; একবার ভাবুন ক্রিকেটারদের অবস্থা কেমন ছিল সেখানে?
এইভাবে খানিকটা বাদে কিভাবে মাঠে নামবে ক্রিকেটাররা! খেলোয়ারদের টাকায় ক্রিকেটারদের জীবন বিপন্ন করে বিসিবি হয়তো আছে খোশমেজাজে। সর্বোচ্চ হয়তো বিসিবি সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে এসে দুঃখপ্রকাশ করবে। নানান কথা বলে যাবে। কিন্তু দিনশেষে এই ভয়ংকর স্মৃতি ক্রিকেটারদের বার বার ফিরে আসবে। যদি বিসিবি ব্যবস্থা নিতে চাইতোই, তবে সেই নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই শিক্ষা নিত। তবে আর আজকের দিনটা দেখতে হয় না!
কতটা বাধ্য হলে একজন ক্রিকেটার বলেন- ‘এখানে অসুস্থ হয়ে মরলে তো আমরা মরবো, কারো তো কিছু হবে না।’ ভাবা যায়, এমন মন্তব্যের পেছনের গল্পটা!