তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে নয়াদিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তার এই সফর। পাশাপাশি আজ বিকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বৈঠকের আগে কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুই দেশের নাগরিকদের লেনদেন সহজীকরণে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না। আমরা চাই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য। আমরা কোনো কারচুপি চাই না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন চাই। সেখানে কেউ যদি আমাদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কেউ যদি মাতব্বরির ভূমিকা নিয়ে আসে, আমরা সেটি সহ্য করব না। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কাউকে ভয় পায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো চাপের মুখে নেই। কারণ আমরা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, সুন্দর একটি নির্বাচন করব। অন্যরা পছন্দ করুক বা না করুক, এটি তাদের সমস্যা। তারা চাপের মুখে পড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা টিকে থাকব।’ তিনি জানান, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে কানেকটিভিটি, তিস্তার পানি বণ্টন, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে নয়াদিল্লি যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত তার সভাপতিত্বে হতে যাওয়া এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। অন্য আটটি দেশ হচ্ছে—মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিংগাপুর, স্পেন ও আরব আমিরাত। ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অনন্য সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। বাংলাদেশ ১৮তম জি-২০ সম্মেলনের সব সভায় অংশ নিচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে সরকারের অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতি।
আগামীকাল শনিবার জি-২০ নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত্’। এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। শনিবার সম্মেলনের সাইডলাইনে অন্যান্য দেশের একাধিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাথমিকভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী, সৌদি যুবরাজ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষদিন ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তিনি দিল্লিতে বাংলাদেশের হাঁড়িভাঙা জাতের আমের চারা রোপণ করবেন। এরপর তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেবেন। ১০ সেপ্টেম্বরই প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন—পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সংগঠন জি-২০-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ভারত। জি-২০-এর সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ববাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।