আমরা থাকতাম পুরাতন ঢাকায় বুডীগঙা নদীর তীর ঘেষে। সেখানে সব ধর্ম বর্ণ গোত্র ও জাতির ছিল সহাবস্হান। কে কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিল তা কেউ ফিরেও তাকাতো না। সবাই সবাইকে ভাই হিসাবে গণ্য করতো। দিকচক্র বল ঘুরে যখন শরৎ আসতো তখন শুনতে পেতাম ঢাক-ঢোলের আওয়াজ আর চারিদিকে উলু ধ্বনি, মন ছুঁয়ে যেতো একটা অন্য রকম অনুভূতি। আকাশ পানে দৃস্টিগোচর হলেই দেখতে পেতাম আকাশের উজ্জল নিলীমায় ভেসে যাওয়া মেঘের ভেলা, আর বুড়ীগঙ্গার ওপাড়ে গেলে ধু ধু প্রান্তরে কাঁসফুলের দোলা।
শরৎ মানেই বুঝতাম ঐ এলো দূর্গাপূজা। আমরা সবাই ছুটতাম প্রতিমা দেখতে। এখনো মনে পড়ে আমাদের বাড়ীর গায়ে গায়ে লাগানো হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পরিবার থাকতো, তারা ছিল ৫ ভাই ৩ বোন, আর তাদের ছেলে মেয়ের সংখ্যা ছিল মাশাল্লাহ ৩১ জন। এদের ভিতর তাদের তৃতীয় বোনের বড ছেলে লাট্ট থাকতো তার নানা বাড়ি। সেই ছোট বেলা থেকেই তার মামা-মামীরা এক প্রকার জোর করেই তাকে তাদের কাছে রেখে দিয়েছিল। আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল এই লাট্ট। সে খুব ভাল ফুটবল খেলতে পারতো তাই কোন ম্যাচ যদি হতো অন্য পাড়ার সাথে বিশেষ করে লক্ষীবাজার কিংবা কলতা বাজারের সাথে খেলা তাহলে তাকে নামানো হতো ব্যাকি হিসাবে আর যদি রোকনপুর বা বাংলা বাজারের সাথে সে ক্ষেত্রে আমাদের লাট্ট খেলতো সেন্টার ফরোয়ার্ড। এ ছাডা লাট্ট বাবু লাড্ডু ঘোরাতে পারতো চমৎকার, তার সাথে আমরা কেউ পেরে উঠতাম না। প্রতি বছর দূর্গাপূজার সময় তাদের বাসায় আমাদের নিত্যদিন যাতায়াত ছিল, তাদের আত্মীয়-স্বজন এলে উনাদের আমরাই স্বাগত জানাতাম, সেইসাথে চলতো আমাদের নাড়ু, সন্দেশ, মিস্টি খাওয়ার ধূম।
দূর্গাপুজার আগের রাতে আমরা রেডিও নিয়ে আকাশবানীর স্টেশন খুলে বসে থাকতাম বিরেন্দ্রো কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট কন্ঠে যখন ভেসে উঠতো – “ইয়া দেবী শরবোভূতেষু নমেস্তই শই নমেস্তই শই নমঃ নমহার”। তখন আমাদের মনে হিল্লোল বয়ে যেতো। আমরা চুপচাপ শুনতাম। একদিনের কথা আমার বেশ মনে আছে। সেবার আমি বিকেলে মামা বাডী ফরিদপুরের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিয়েছিলাম কিন্তু আরিচা যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সে সময় আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। প্রচন্ড বাতাসে পদ্মা নদীর পানির ঢেউ উথাল-পাথাল করছে সুতারাং ফেরী চলাচল বন্ধ। কয়েকজন মাঝি মাল্লারা দুর্দান্ত সাহসের উপর ভর করে নদী পারাপার করার জন্য যাত্রী খুঁজতে খুব হাঁক ডাক দিয়ে ও যখন দু-একজন ছাডা কাউকে পেলো না তখন তারা হাল ছেড়ে দিল। এই বাতাশে কেউ পদ্মা পার হতে সাহস পেলো না, কারন সবাই জানে প্রমত্ত পদ্মার ভয়ংকর রূপ যারা দেখেছে বা শুনেছে তাদের হাত পা পেটে সিদিয়ে গেছে।
বাসে বসে মেঘে ঢাকা সূর্য দেখা না গেলেও চারিদিক অন্ধকার ঘনিয়ে এসে রাত হয়েছে তা মর্ত্যের মানুষদের জানান দিলো অতএব এই অবস্হায় আমার কি করা উচিত তা ভেবে কূল কিনারা পেলাম না, এদিকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, কখনো বা বিজলীর আলো আসমান জমিন একাকার করে গুরু গম্ভীর আওয়াজে ঠাটা পড়ছে। অবশেষে বাইরে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে আমি মাথা গোঁজার ঠাইয়ের জন্য চারিদিক খোঁজ খবর নিচ্ছি কিন্ত কোথাও জায়গা খালি নাই। বুঝতে অসুবিধা হলো না ফেরী, লঞ্চ, নৌকা, স্পীড বোর্ড পদ্মা পারাপার না করায় বা ঝড়ো আবাহাওয়া দেখে মানুষজন এপারেই রয়ে গেছে। তাই তারা উপায়অন্ত না পেয়ে রাতে থাকার জন্য প্রায় সব টিনের ছাপডা হোটেল গুলির সীট দখল করে ফেলেছে, আমি খুঁজতে খুঁজতে অতঃপর একটা ছাপরা হোটেল পেয়ে গেলাম মাথা গোঁজার জন্য, আর কালবিলম্ব না করে রুম বুক করে ফেল্লাম। সেই হোটেলের একজন জানতে চাইলো একা থাকবেন নাকি দুইজন থাকবেন? যখন জানালাম একা। তিনি এক রাতের জন্য অগ্রিম সম্পূর্ন টাকা নিয়ে বেড়ার একটা খোঁপ দেখিয়ে বল্লেন, এটাই আপনার ঘর। সাথে একটা তালার বস্তা দিয়ে বল্লো, আজ অনেক লোক (বোর্ডার) হওয়াতে আমাদের চাদর আর বালিশ শেষ হয়ে গেছে তাই এখন ছালা ছাডা আমাদের এখন আর কোন উপায় নাই।
পথের ক্লান্তি আর গন্তব্যে না পৌছাবার চিন্তায় দুই চোখের পাতা এক হয়েছে অমনি বুঝলাম আর এক ভদ্রলোক আমার চৌকিতে বসলেন এবং চাদর গায়ে জরিয়ে শুয়ে পড়লেন, আমি হতবাক হয়ে বের হয়ে গেলাম। বারান্দায় এক লোককে দেখলাম টেবিলে হারিকেনের আলোতে কি একটা লিখছে, কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন আমার কোন অসুবিধা হয়েছে কি না? আমি বিনা দ্বিধায় বল্লাম, আমি একলা থাকবো বলেই তো তোমাদের ঘরটি নিয়েছিলাম তবে এখন কেন আর এক ভদ্রলোককে ঢুকিয়েছো? তিনি অসহায় ভাবে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন, তার মুখে এর কোন উত্তর ছিল না তবে আমি বুঝলাম হঠাৎ এত লোক আটকা পড়ায় বেচারারা বিপদেই পড়েছে, আমি আর তাকে বিব্রত না করে হাটতে হাটতে নদীর কিনারে এসে দাঁড়ালাম, তখনও গুডি গুডি বৃষ্টি পড়া কিন্তু থেমেনি, সেই সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এখন অবধি বিরামহীনভাবে পড়েই চলেছে তবে বাতাসে ঠান্ডার তিব্রতা কিছুটা কমেছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা বড গাছতলায় আশ্রয় নিলাম। হঠাৎ ইথারে ভেসে এলো মহালয়ার অনুষ্ঠান। আমি আরো কাছে গিয়ে দেখি একটা ছাপডা হোটেলের সামনে ছোট জটলা, সেখানে ট্রানজিস্টারের সামনে বসে মনোযোগের সাথে শুনছে, আমিও তাদের সাথে সামিল হলাম।
সেই জটলায় একজন মুরব্বী পূজা বিষয়ক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সাবলীল ভাবে উত্তর দিচ্ছেন। যারা বলছেন ও শুনছেন সেটা দেখে আমার মনে হলো- “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” উক্তিটি। সেদিনের সেই কথা গুলি সব মনে না থাকলেও কিছু কিছু স্মরণে রয়েছে। যদিও আমি সেই সব বেশীরভাগই জানতাম।
একজন জানতে চাইলো-দেবী দূর্গা পূজা কোথায় এবং কি ভাবে প্রচলন হয়েছিল? প্রশ্নের জবাবে জানাগেলো, কি ভাবে ও কখন শুরু হয়েছিল তা নিয়ে পন্ডিত মহলে বহু মতভেদ আছে, তবে অনেকের মতে, রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের সময় থেকে বাংলাদেশে দূর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। অন্য প্রাণ অনুসারে সত্যযুগে রাজা সুরথ তার রাজধানী বলিপুরে প্রথম দেবী দূর্গার পূজা আরম্ভ করেন। উক্ত পূজা বসন্ত কালে হয়েছিল বলে এই পূজাকে “বাসন্তী পূজা” বলে। এই ক্ষেত্রে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেলো, কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ চিকিৎসাহ করতে নিউ ইয়র্কে এসেছেন, উনার এখানে চিকিৎসা চলছিল হাসপাতাল আর বাসায়। এর মধ্যে পূঁজার সময় হয়ে গেলো, ছোট ভাইয়ের বন্ধু বিশ্বজিৎ মজুমদার আমাকে ধরলো, হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বানী নিয়ে দিতে। গাজী কাসেম ভাইকে বলে বানীটি নেই, তিনি ৪ লাইনের একটা শুভেচ্ছা বানী দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাসন্তী নামক কোন পূজা আছে সেটা উনার জানা ছিল না তবু এ পূজা অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করছি।
নদীর পাড়ের হুহু বাতাশে সেদিনকার সেই জটলায় একজন জানতে চাইলো “অকালবোধন “কি? উত্তরে জানা গেল, শ্রী রামচন্দ্র যখন রাবনকে বধ করার উদ্দেশ্য লঙ্কা যাওয়ার কিছু আগে দেবী দুর্গার বোধন করে তিনি দূর্গাপূজা করেন। উল্লেখ্য, দেব-দেবীরা শরৎকালে ঘুমিয়ে থাকেন, তাই শ্রী শ্রী রামচন্দ্র অসময়ে দেবীকে জাগ্রত করে পূজা করেছিলেন বলে এই পূজাকেই অকালবোধন বলে। শীতের মধ্যে চাদর জরিয়ে একজন কাঁপতে কাঁপতে বল্লো, পূজা কতদিন হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে মুরব্বী অনেক কথাই বলে গেলেন, শেষে তিনি যে কথাটি বল্লেন, তা হলো দেবী দূর্গা অসুরদলনী রুপকে ছাপিয়ে কন্যা রুপেই মর্ত্যে আবির্ভূত হন। এই কন্যা বৎসরে একবার স্বপরিবারে আসেন মর্ত্যে, তার পিতা মাতার সাথে দেখা করতে। দেবী দূর্গা চারদিন মর্ত্যে অবস্হান করে পঞ্চম দিনে ফিরে যান কৈলাসে তার স্বামী শিবের কাছে নিজ ঘরে।
দেবী দূর্গার দশটি হাত থাকে বলে দেবীকে দশভূজা দেবী দূর্গা বলা হয়।
সমগ্র বিশ্বে যা শক্তি সেই সমস্টিশক্তিই হলো দশভূজা দূর্গা, অনেক পন্ডিতেরা বলেন, বেদে “দূর্গা” অর্থে মহাশক্তি উল্লেখ আছে বলে মনে করেন। বর্তমানে দূর্গাপূজা বাঙালী সমাজে বহুল জনপ্রিয় হলেও মধ্যযুগের পূর্ব পর্যন্ত বাংলায় দূর্গা পূঁজার প্রচলন ছিল না। ষোড়শ শতাব্দীতে অবিভক্ত বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম এই পূজা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। ১৭৫৭ সালে কলকাতার শোভাবাজারে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের উদ্যোগে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় পর্যন্ত দূর্গাপূজা কেবল উচ্চ সমাজে অর্থাৎ রাজ পরিবার এবং জমিদার শ্রেনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের তাতে কোন অধিকার ছিল না। কিন্তু মানুষ সমাজবদ্ধ প্রানী। তারা চায় মনের সাথে মনের রং মেশাতে। আনন্দকে তারা সকলে মিলে একত্রে ভোগ করতে চায়। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রায় সমকালে উরিষ্যার রামেশ্বরপুর নামক অঞ্চলে গ্রামবাসীরা মিলিত হয়ে দেবী দূর্গার আরাধনা করেন।এই পূঁজার মাধ্যমেই সকলে মিলে দূর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর ১৭৯০ সালে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায় প্রথমবার বারো (১২) জন ব্রাক্ষন মিলিত হয়ে দেবী দুর্গার মূর্তিতে “বারোয়ারি” দূর্গাপূজা করেন। বারোজন বন্ধু (ইয়ার) মিলে পূজাটি সুসম্পর্ন করায় এর নাম হয় বারো-ইয়ারি (১২ জন বন্ধু) অর্থ্যৎ বারোয়ারি, সেখানে মুস্টিমেয় কয়েকজনের চাঁদার টাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর জনসাধারনের চাঁদার টাকায় পূজাকে সার্বজনীন বা সর্বজনীন পূজা বলা হয়। এই সর্বজনীন দূর্গা পূজা প্রথম কলিকাতায় ১৯২৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বিশ্বের সকল শক্তির মিলিত রূপ শ্রী শ্রী দূর্গা। শিব, দূর্গা বা কালী সব একই শক্তি। ঈশ্বরের মাতৃরূপ শ্রী দূর্গার মধ্যে বিদ্যমান। এই মহাশক্তির আরাধনায় আমরা দেবীকে বিভিন্ন রূপে বন্দনা করি। দূর্গাপুজার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কুমারী পূজা। সাধারনতঃ কুমারী বলতে বোঝানো হয় অবিবাহিত কন্যাকে। দেবীপুরাণের মতে, এক(১) বৎসর বয়স থেকে ষোল(১৬) বৎসর বয়সের বালিকারা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত কুমারী রূপে পূজিত হওয়ার যোগ্য।
আমার আর একটা ঘটনা খুব মনে পডে, পুজা এলে আমরা প্রতিমা দেখতে যেতাম। ওখানে মহাল্লায় মহাল্লায় পুজা হতো, এই পুজা দেখতে আমরা দূর বহুদূর যেতাম। আমরা প্রায় প্রতিদিন বন্ধুদের বাডীতে হাজিরা দিয়ে মন্ড মিঠাই খেয়ে মারতাম ভো দৌড় সেই ফরাশগঞ্জে, আমাদের স্কুলের ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক মান্নান ভাইয়ের বাড়ি। সেখানে যাবার কারণ হলো উনাদের পাশের বাডীতে নারায়নরা থাকতো আর তাদের বাসায় খুব ধূমধাম করে দেবী দূর্গার আরাধনা হতো, তাদের প্রতিমা দেখার মত হত। এত বড় প্রতিমা আমি দেখিনি কোন পূজা মন্ডবে। সেখানে নাড়ু সন্দেশ, রসগোল্লা পেতাম তবে আমাদের আকর্ষন ছিল গরম গরম ফুলকো লুচি আর নিরামিষ। আমাদের বন্ধুদের বাড়ি অথবা মহল্লার পুজা মন্ডবে মিষ্টি নাডু পেলেও লুচি নিরামিষ যে মিলত না তা কিন্তু নয়, তবে অন্য জায়গায় আমাদের পুজা দেখার জন্যই যাওয়া হতো।
দেবী দূর্গার পায়ের তলায় মহিষাসুরকে দেখতাম। মাসীমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, মহিষাসুর জানতেন তাকে কোন দেবতা হত্যা বা মারতে পারবে না তবে তার মৃত্যু হবে কোন নারীর হাতে, স্বাভাবিক ভাবেই মহিষাসুর মাথা থেকে এই চিন্তা বাদ দিয়েছিল কারণ তার সাথে মানুষ তো কোন ছাড় দেবতারা যুদ্ধে পারেনি, সেক্ষেত্রে নারী? তাই দিনকে দিন তার অত্যচার বেড়ে গেলেও সে নিশ্চিন্তে থাকতো, মর্ত্যে অরাজকতা আরম্ভ হলো ঠিক সে সময় দেবী দুর্গাকে সৃষ্টি করা হলো। মহিষাসুরকে শিক্ষা দিতে, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে যুদ্ধ পরাজিত করে হত্যা করলো। এবং মর্ত্যে শান্তি ফিরিয়ে আনে। সত্য না ভুল তখন আর বুঝিনি।
তবে সেই সাথে যে কোন পূঁজার মূল উদ্দেশ্য কি সেটাও বলেছিলেন, আত্মশুদ্ধি, আত্মনিবেদন, মনের পশুশক্তি দমন, জগতের কল্যাণ আর প্রিয়পরমের সান্নিধ্য লাভ করা। এখনো মনে আছে মাসীমার সেই কথাগুলি।
আমরা থাকতাম পুরাতন ঢাকায় বুডীগঙা নদীর তীর ঘেষে। সেখানে সব ধর্ম বর্ণ গোত্র ও জাতির ছিল সহাবস্হান। কে কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিল তা কেউ ফিরেও তাকাতো না। সবাই সবাইকে ভাই হিসাবে গণ্য করতো। দিকচক্র বল ঘুরে যখন শরৎ আসতো তখন শুনতে পেতাম ঢাক-ঢোলের আওয়াজ আর চারিদিকে উলু ধ্বনি, মন ছুঁয়ে যেতো একটা অন্য রকম অনুভূতি। আকাশ পানে দৃস্টিগোচর হলেই দেখতে পেতাম আকাশের উজ্জল নিলীমায় ভেসে যাওয়া মেঘের ভেলা, আর বুড়ীগঙ্গার ওপাড়ে গেলে ধু ধু প্রান্তরে কাঁসফুলের দোলা।
শরৎ মানেই বুঝতাম ঐ এলো দূর্গাপূজা। আমরা সবাই ছুটতাম প্রতিমা দেখতে। এখনো মনে পড়ে আমাদের বাড়ীর গায়ে গায়ে লাগানো হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পরিবার থাকতো, তারা ছিল ৫ ভাই ৩ বোন, আর তাদের ছেলে মেয়ের সংখ্যা ছিল মাশাল্লাহ ৩১ জন। এদের ভিতর তাদের তৃতীয় বোনের বড ছেলে লাট্ট থাকতো তার নানা বাড়ি। সেই ছোট বেলা থেকেই তার মামা-মামীরা এক প্রকার জোর করেই তাকে তাদের কাছে রেখে দিয়েছিল। আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল এই লাট্ট। সে খুব ভাল ফুটবল খেলতে পারতো তাই কোন ম্যাচ যদি হতো অন্য পাড়ার সাথে বিশেষ করে লক্ষীবাজার কিংবা কলতা বাজারের সাথে খেলা তাহলে তাকে নামানো হতো ব্যাকি হিসাবে আর যদি রোকনপুর বা বাংলা বাজারের সাথে সে ক্ষেত্রে আমাদের লাট্ট খেলতো সেন্টার ফরোয়ার্ড। এ ছাডা লাট্ট বাবু লাড্ডু ঘোরাতে পারতো চমৎকার, তার সাথে আমরা কেউ পেরে উঠতাম না। প্রতি বছর দূর্গাপূজার সময় তাদের বাসায় আমাদের নিত্যদিন যাতায়াত ছিল, তাদের আত্মীয়-স্বজন এলে উনাদের আমরাই স্বাগত জানাতাম, সেইসাথে চলতো আমাদের নাড়ু, সন্দেশ, মিস্টি খাওয়ার ধূম।
দূর্গাপুজার আগের রাতে আমরা রেডিও নিয়ে আকাশবানীর স্টেশন খুলে বসে থাকতাম বিরেন্দ্রো কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট কন্ঠে যখন ভেসে উঠতো – “ইয়া দেবী শরবোভূতেষু নমেস্তই শই নমেস্তই শই নমঃ নমহার”। তখন আমাদের মনে হিল্লোল বয়ে যেতো। আমরা চুপচাপ শুনতাম। একদিনের কথা আমার বেশ মনে আছে। সেবার আমি বিকেলে মামা বাডী ফরিদপুরের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিয়েছিলাম কিন্তু আরিচা যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সে সময় আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। প্রচন্ড বাতাসে পদ্মা নদীর পানির ঢেউ উথাল-পাথাল করছে সুতারাং ফেরী চলাচল বন্ধ। কয়েকজন মাঝি মাল্লারা দুর্দান্ত সাহসের উপর ভর করে নদী পারাপার করার জন্য যাত্রী খুঁজতে খুব হাঁক ডাক দিয়ে ও যখন দু-একজন ছাডা কাউকে পেলো না তখন তারা হাল ছেড়ে দিল। এই বাতাশে কেউ পদ্মা পার হতে সাহস পেলো না, কারন সবাই জানে প্রমত্ত পদ্মার ভয়ংকর রূপ যারা দেখেছে বা শুনেছে তাদের হাত পা পেটে সিদিয়ে গেছে।
বাসে বসে মেঘে ঢাকা সূর্য দেখা না গেলেও চারিদিক অন্ধকার ঘনিয়ে এসে রাত হয়েছে তা মর্ত্যের মানুষদের জানান দিলো অতএব এই অবস্হায় আমার কি করা উচিত তা ভেবে কূল কিনারা পেলাম না, এদিকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, কখনো বা বিজলীর আলো আসমান জমিন একাকার করে গুরু গম্ভীর আওয়াজে ঠাটা পড়ছে। অবশেষে বাইরে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে আমি মাথা গোঁজার ঠাইয়ের জন্য চারিদিক খোঁজ খবর নিচ্ছি কিন্ত কোথাও জায়গা খালি নাই। বুঝতে অসুবিধা হলো না ফেরী, লঞ্চ, নৌকা, স্পীড বোর্ড পদ্মা পারাপার না করায় বা ঝড়ো আবাহাওয়া দেখে মানুষজন এপারেই রয়ে গেছে। তাই তারা উপায়অন্ত না পেয়ে রাতে থাকার জন্য প্রায় সব টিনের ছাপডা হোটেল গুলির সীট দখল করে ফেলেছে, আমি খুঁজতে খুঁজতে অতঃপর একটা ছাপরা হোটেল পেয়ে গেলাম মাথা গোঁজার জন্য, আর কালবিলম্ব না করে রুম বুক করে ফেল্লাম। সেই হোটেলের একজন জানতে চাইলো একা থাকবেন নাকি দুইজন থাকবেন? যখন জানালাম একা। তিনি এক রাতের জন্য অগ্রিম সম্পূর্ন টাকা নিয়ে বেড়ার একটা খোঁপ দেখিয়ে বল্লেন, এটাই আপনার ঘর। সাথে একটা তালার বস্তা দিয়ে বল্লো, আজ অনেক লোক (বোর্ডার) হওয়াতে আমাদের চাদর আর বালিশ শেষ হয়ে গেছে তাই এখন ছালা ছাডা আমাদের এখন আর কোন উপায় নাই।
পথের ক্লান্তি আর গন্তব্যে না পৌছাবার চিন্তায় দুই চোখের পাতা এক হয়েছে অমনি বুঝলাম আর এক ভদ্রলোক আমার চৌকিতে বসলেন এবং চাদর গায়ে জরিয়ে শুয়ে পড়লেন, আমি হতবাক হয়ে বের হয়ে গেলাম। বারান্দায় এক লোককে দেখলাম টেবিলে হারিকেনের আলোতে কি একটা লিখছে, কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন আমার কোন অসুবিধা হয়েছে কি না? আমি বিনা দ্বিধায় বল্লাম, আমি একলা থাকবো বলেই তো তোমাদের ঘরটি নিয়েছিলাম তবে এখন কেন আর এক ভদ্রলোককে ঢুকিয়েছো? তিনি অসহায় ভাবে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন, তার মুখে এর কোন উত্তর ছিল না তবে আমি বুঝলাম হঠাৎ এত লোক আটকা পড়ায় বেচারারা বিপদেই পড়েছে, আমি আর তাকে বিব্রত না করে হাটতে হাটতে নদীর কিনারে এসে দাঁড়ালাম, তখনও গুডি গুডি বৃষ্টি পড়া কিন্তু থেমেনি, সেই সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এখন অবধি বিরামহীনভাবে পড়েই চলেছে তবে বাতাসে ঠান্ডার তিব্রতা কিছুটা কমেছে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা বড গাছতলায় আশ্রয় নিলাম। হঠাৎ ইথারে ভেসে এলো মহালয়ার অনুষ্ঠান। আমি আরো কাছে গিয়ে দেখি একটা ছাপডা হোটেলের সামনে ছোট জটলা, সেখানে ট্রানজিস্টারের সামনে বসে মনোযোগের সাথে শুনছে, আমিও তাদের সাথে সামিল হলাম।
সেই জটলায় একজন মুরব্বী পূজা বিষয়ক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সাবলীল ভাবে উত্তর দিচ্ছেন। যারা বলছেন ও শুনছেন সেটা দেখে আমার মনে হলো- “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” উক্তিটি। সেদিনের সেই কথা গুলি সব মনে না থাকলেও কিছু কিছু স্মরণে রয়েছে। যদিও আমি সেই সব বেশীরভাগই জানতাম।
একজন জানতে চাইলো-দেবী দূর্গা পূজা কোথায় এবং কি ভাবে প্রচলন হয়েছিল? প্রশ্নের জবাবে জানাগেলো, কি ভাবে ও কখন শুরু হয়েছিল তা নিয়ে পন্ডিত মহলে বহু মতভেদ আছে, তবে অনেকের মতে, রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের সময় থেকে বাংলাদেশে দূর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। অন্য প্রাণ অনুসারে সত্যযুগে রাজা সুরথ তার রাজধানী বলিপুরে প্রথম দেবী দূর্গার পূজা আরম্ভ করেন। উক্ত পূজা বসন্ত কালে হয়েছিল বলে এই পূজাকে “বাসন্তী পূজা” বলে। এই ক্ষেত্রে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেলো, কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ চিকিৎসাহ করতে নিউ ইয়র্কে এসেছেন, উনার এখানে চিকিৎসা চলছিল হাসপাতাল আর বাসায়। এর মধ্যে পূঁজার সময় হয়ে গেলো, ছোট ভাইয়ের বন্ধু বিশ্বজিৎ মজুমদার আমাকে ধরলো, হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বানী নিয়ে দিতে। গাজী কাসেম ভাইকে বলে বানীটি নেই, তিনি ৪ লাইনের একটা শুভেচ্ছা বানী দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাসন্তী নামক কোন পূজা আছে সেটা উনার জানা ছিল না তবু এ পূজা অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করছি।
নদীর পাড়ের হুহু বাতাশে সেদিনকার সেই জটলায় একজন জানতে চাইলো “অকালবোধন “কি? উত্তরে জানা গেল, শ্রী রামচন্দ্র যখন রাবনকে বধ করার উদ্দেশ্য লঙ্কা যাওয়ার কিছু আগে দেবী দুর্গার বোধন করে তিনি দূর্গাপূজা করেন। উল্লেখ্য, দেব-দেবীরা শরৎকালে ঘুমিয়ে থাকেন, তাই শ্রী শ্রী রামচন্দ্র অসময়ে দেবীকে জাগ্রত করে পূজা করেছিলেন বলে এই পূজাকেই অকালবোধন বলে। শীতের মধ্যে চাদর জরিয়ে একজন কাঁপতে কাঁপতে বল্লো, পূজা কতদিন হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে মুরব্বী অনেক কথাই বলে গেলেন, শেষে তিনি যে কথাটি বল্লেন, তা হলো দেবী দূর্গা অসুরদলনী রুপকে ছাপিয়ে কন্যা রুপেই মর্ত্যে আবির্ভূত হন। এই কন্যা বৎসরে একবার স্বপরিবারে আসেন মর্ত্যে, তার পিতা মাতার সাথে দেখা করতে। দেবী দূর্গা চারদিন মর্ত্যে অবস্হান করে পঞ্চম দিনে ফিরে যান কৈলাসে তার স্বামী শিবের কাছে নিজ ঘরে।
দেবী দূর্গার দশটি হাত থাকে বলে দেবীকে দশভূজা দেবী দূর্গা বলা হয়।
সমগ্র বিশ্বে যা শক্তি সেই সমস্টিশক্তিই হলো দশভূজা দূর্গা, অনেক পন্ডিতেরা বলেন, বেদে “দূর্গা” অর্থে মহাশক্তি উল্লেখ আছে বলে মনে করেন। বর্তমানে দূর্গাপূজা বাঙালী সমাজে বহুল জনপ্রিয় হলেও মধ্যযুগের পূর্ব পর্যন্ত বাংলায় দূর্গা পূঁজার প্রচলন ছিল না। ষোড়শ শতাব্দীতে অবিভক্ত বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম এই পূজা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। ১৭৫৭ সালে কলকাতার শোভাবাজারে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের উদ্যোগে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় পর্যন্ত দূর্গাপূজা কেবল উচ্চ সমাজে অর্থাৎ রাজ পরিবার এবং জমিদার শ্রেনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের তাতে কোন অধিকার ছিল না। কিন্তু মানুষ সমাজবদ্ধ প্রানী। তারা চায় মনের সাথে মনের রং মেশাতে। আনন্দকে তারা সকলে মিলে একত্রে ভোগ করতে চায়। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রায় সমকালে উরিষ্যার রামেশ্বরপুর নামক অঞ্চলে গ্রামবাসীরা মিলিত হয়ে দেবী দূর্গার আরাধনা করেন।এই পূঁজার মাধ্যমেই সকলে মিলে দূর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর ১৭৯০ সালে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায় প্রথমবার বারো (১২) জন ব্রাক্ষন মিলিত হয়ে দেবী দুর্গার মূর্তিতে “বারোয়ারি” দূর্গাপূজা করেন। বারোজন বন্ধু (ইয়ার) মিলে পূজাটি সুসম্পর্ন করায় এর নাম হয় বারো-ইয়ারি (১২ জন বন্ধু) অর্থ্যৎ বারোয়ারি, সেখানে মুস্টিমেয় কয়েকজনের চাঁদার টাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর জনসাধারনের চাঁদার টাকায় পূজাকে সার্বজনীন বা সর্বজনীন পূজা বলা হয়। এই সর্বজনীন দূর্গা পূজা প্রথম কলিকাতায় ১৯২৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বিশ্বের সকল শক্তির মিলিত রূপ শ্রী শ্রী দূর্গা। শিব, দূর্গা বা কালী সব একই শক্তি। ঈশ্বরের মাতৃরূপ শ্রী দূর্গার মধ্যে বিদ্যমান। এই মহাশক্তির আরাধনায় আমরা দেবীকে বিভিন্ন রূপে বন্দনা করি। দূর্গাপুজার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কুমারী পূজা। সাধারনতঃ কুমারী বলতে বোঝানো হয় অবিবাহিত কন্যাকে। দেবীপুরাণের মতে, এক(১) বৎসর বয়স থেকে ষোল(১৬) বৎসর বয়সের বালিকারা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত কুমারী রূপে পূজিত হওয়ার যোগ্য।
আমার আর একটা ঘটনা খুব মনে পডে, পুজা এলে আমরা প্রতিমা দেখতে যেতাম। ওখানে মহাল্লায় মহাল্লায় পুজা হতো, এই পুজা দেখতে আমরা দূর বহুদূর যেতাম। আমরা প্রায় প্রতিদিন বন্ধুদের বাডীতে হাজিরা দিয়ে মন্ড মিঠাই খেয়ে মারতাম ভো দৌড় সেই ফরাশগঞ্জে, আমাদের স্কুলের ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক মান্নান ভাইয়ের বাড়ি। সেখানে যাবার কারণ হলো উনাদের পাশের বাডীতে নারায়নরা থাকতো আর তাদের বাসায় খুব ধূমধাম করে দেবী দূর্গার আরাধনা হতো, তাদের প্রতিমা দেখার মত হত। এত বড় প্রতিমা আমি দেখিনি কোন পূজা মন্ডবে। সেখানে নাড়ু সন্দেশ, রসগোল্লা পেতাম তবে আমাদের আকর্ষন ছিল গরম গরম ফুলকো লুচি আর নিরামিষ। আমাদের বন্ধুদের বাড়ি অথবা মহল্লার পুজা মন্ডবে মিষ্টি নাডু পেলেও লুচি নিরামিষ যে মিলত না তা কিন্তু নয়, তবে অন্য জায়গায় আমাদের পুজা দেখার জন্যই যাওয়া হতো।
দেবী দূর্গার পায়ের তলায় মহিষাসুরকে দেখতাম। মাসীমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, মহিষাসুর জানতেন তাকে কোন দেবতা হত্যা বা মারতে পারবে না তবে তার মৃত্যু হবে কোন নারীর হাতে, স্বাভাবিক ভাবেই মহিষাসুর মাথা থেকে এই চিন্তা বাদ দিয়েছিল কারণ তার সাথে মানুষ তো কোন ছাড় দেবতারা যুদ্ধে পারেনি, সেক্ষেত্রে নারী? তাই দিনকে দিন তার অত্যচার বেড়ে গেলেও সে নিশ্চিন্তে থাকতো, মর্ত্যে অরাজকতা আরম্ভ হলো ঠিক সে সময় দেবী দুর্গাকে সৃষ্টি করা হলো। মহিষাসুরকে শিক্ষা দিতে, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে যুদ্ধ পরাজিত করে হত্যা করলো। এবং মর্ত্যে শান্তি ফিরিয়ে আনে। সত্য না ভুল তখন আর বুঝিনি।
তবে সেই সাথে যে কোন পূঁজার মূল উদ্দেশ্য কি সেটাও বলেছিলেন, আত্মশুদ্ধি, আত্মনিবেদন, মনের পশুশক্তি দমন, জগতের কল্যাণ আর প্রিয়পরমের সান্নিধ্য লাভ করা। এখনো মনে আছে মাসীমার সেই কথাগুলি।