অমরজিত সিং, ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর শহরের একজন শিখ ব্যক্তি। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় তিনি তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কর্তারপুরের গুরুদোয়ারা দরবারে গত বুধবার ৭৫ বছর পর তিনি তার পরিবারের সাথে দেখা করেন। হুইলচেয়ারে বসে মুসলিম বোন কুলসুম আখতারকে দেখার পর তার খুশির সীমা ছিল না।
আবেগঘন মুহূর্তে তাদের চোখ অস্রুসিক্ত হয়ে পড়ে।জানা গেছে, সিং তার বোনের সাথে দেখা করতে ভিসা নিয়ে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পাকিস্তানে পৌঁছেছিলেন। ৬৫ বছর বয়সী কুলসুম সিংকে দেখে তিনি তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। কুলসুম পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ থেকে কর্তারপুরে এসেছিলেন। সঙ্গে তার ছেলে শাহজাদ আহমেদ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ছিল। দুই ভাইবোন একে অপরের জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন।
গণমাধ্যমকে কুলসুম বলেছেন, তার বাবা-মা, ভাই এবং এক বোনকে রেখে ১৯৪৭ সালে ভারতের জলন্ধর থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন। কুলসুম পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া ভাই এবং বোনের কথা শুনেছেন। তার মা হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের কথা মনে হলেই কাঁদতেন।
কুলসুম আরো বলেছেন, তিনি কখনো আশা করেননি তার ভাই এবং বোনের সাথে দেখা করতে পারবেন। কয়েক বছর আগে তার বাবার এক বন্ধু সর্দার দারা সিং ভারত থেকে পাকিস্তান এসে তার সাথে দেখা করেছিলেন। তার মা দারা সিংকে ভারতে রেখে যাওয়া ছেলে ও মেয়ের কথা জানায়। এবং ভারতে তাদের গ্রামের নাম ও বাড়ির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দেয়।
সর্দার দারা সিং তখন পাদাওয়ান গ্রামে সেই বাড়িতে যান এবং তাকে জানান যে তার ছেলে বেঁচে আছে। কিন্তু তার মেয়ে মারা গেছে। অমরজিৎ সিংকে একটি শিখ পরিবার ১৯৪৭ সালে দত্তক নিয়েছিল বলে জানা যায়।
ভাইয়ের তথ্য পাওয়ার পর কুলসুম তার ভাইয়ের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন এবং দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন।
অমরজিত সিং বলেছেন, যখন তিনি প্রথম জানতে পারলেন যে তার আসল বাবা-মা পাকিস্তানে ছিলেন এবং তারা মুসলিম, তখন তিনি ধাক্কা খান। তবে তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এই ভেবে যে, অনেক পরিবারই সেই সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
সিং সব সময় তার আসল ভাই এবং বোনের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তিনি জানান, তার তিন ভাই বেঁচে আছেন জেনে তিনি খুব খুশি। তার এক ভাই জার্মানিতে থাকতে মারা গিয়েছেন।
সিং পাকিস্তান যেয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি তার পরিবারকে ভারতে নিয়ে যেতে চান। যাতে তারা শিখ পরিবারের সাথে দেখা করতে পারেন।
কুলসুমের ছেলে শাহজাদ আহমেদ বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি আমার চাচা যেহেতু শিখ পরিবারে বড় হয়েছেন তাই তিনি একজন শিখ। আমার কিংবা আমার পরিবারের এতে কোনো সমস্যা নেই। । ‘
কর্তারপুর করিডরে দ্বিতীয়বারের মত একটি পরিবারের পুনর্মিলন হলো। এর আগে মে মাসে একটি শিখ পরিবারের জন্ম নেওয়া একজন নারী কর্তারপুরে ভারত থেকে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করেছিলেন। সেই নারীকে একটি মুসলিম দম্পত্তি দত্তক নিয়ে বড় করেছিলেন।