তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের জন্মের পর থেকে সেন্সর বোর্ড ছিল। সেন্সর বোর্ড থাকতে হবে। বোর্ড যাতে অহেতুক কিছু না করে সেটি আমি নজরে রাখি, তবে সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সেগুলো আমরা দেখেছি। সেখানে আমরা যা পেয়েছি সেটা সাথে সাথে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পীদের সাথে এক বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমা বছরের পর বছর সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকার পরেও মুক্তি না পাওয়ায় এ সময় সেন্সর বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিনেমা শিল্প, সেখানেও সেন্সর বোর্ড আছে, প্রত্যেকটা রাজ্যের সিনেমার জন্য সেন্সর আছে, এটা থাকতে হবে। যারা বলে থাকার দরকার নাই, তারা বুঝে বলে নাকি না বুঝে বলে সেটি আমার প্রশ্ন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি একটি সিনেমা বানায়, যেটি আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সেটা যদি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরির কথা বলে যদি পুরো সত্য ঘটনা না আসে, তাহলে তো সেন্সর বোর্ড প্রশ্ন রাখবেই।’
তিনি বলেন, ‘আশার কথা হলো চলচ্চিত্র শিল্প এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে, আমরা অনুদানের পরিমাণ দ্বিগুণ করেছি। আগে যেখানে ১০ কোটি টাকা দেয়া হতো, এখন ২০ কোটি দেয়া হয়। আমি যখন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা আমার কাছে আসেন। তারা আমাকে বললেন, অনুদান যেগুলো দেয়া হয় সেগুলোর অনেকগুলো হলে মুক্তি পায় না। অনেকগুলো আর্ট ফিল্মের জন্য অনুদান দেয়া হয়, তারা সেগুলো বানায় না।’
তিনি জানান, তিনি দেখেছেন যে আসলেই অনেক ছবি (অনুদানপ্রাপ্ত) বানানো হয়নি।
হাছান মাহমুদ বলেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছি, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তারপর বাণিজ্যিক ছবির ক্ষেত্রেও যেগুলো বানানো হয়েছে সেগুলো হলে রিলিজ দেয়া হয়নি, কাউকে স্বত্ব বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা নতুন নীতিমালা করেছি যে কমপক্ষে ১০টি হলে মুক্তি দিতে হবে। পরে এটি বাড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এক কোটি টাকার নিচে কোনো সিনেমা হয় না, ভালো সিনেমা বানাতে মিনিমাম দুই কোটি লাগে। সেক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দিলেন অনুদান যেন শুধু বাণিজ্যিক ছবিতে না দেয়া হয়। আমরা এরপর থেকে বাণিজ্যিক ও আর্ট ছবিতে জোর দেই, ডকুমেন্টারিতেও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যিকে অনুদান বাড়ানোর ওপর আমরা জোর দিয়েছি, সেটার সুফলও আমরা পাচ্ছি। ৬৫টিতে নেমে এসেছিল হল, সেখান থেকে ২১০টা হয়েছে। আর এক বছরের মধ্যে আরো ১০০টা বাড়বে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিনেপ্লেক্স হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এক হাজার টাকার বিশেষ ঋণ তহবিল করেছেন, সেখান থেকে ঋণ নেয়ার জন্য অনেক দরখাস্ত ইতোমধ্যে জমা পড়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে।
এটা অনুদান নয় ব্যাংকিং চ্যানেলে ঋণ দেয়া হচ্ছে। যখন করোনা ছিল তখন ভয়ে কেউ দরখাস্তই করেনি কারণ তখন হল বন্ধ ছিল, পরে করোনা কমে আসার পর দরখাস্ত শুরু করলো তারপরে ব্যাংকগুলোকে আমাদের বোঝাতে হয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে আমরা বসেছি। এরপর দরখাস্ত বেড়েছে। এখন আস্তে আস্তে ডিসপার্স হচ্ছে। এখন যেহতু ভালো সিনেমা হচ্ছে তাই দরখাস্ত বাড়ছে। এটা একটা রিভলভিং ফান্ড। এটা দিয়ে অনেক হল রেনোভেট করা যাবে। নতুন হল করা যাবে। প্রথমে ৫ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছিল, আমরা দেখেছি এতে কোয়ালিটি হল হয় না। এজন্য টাকার অংক বাড়িয়ে সেটা ১০ কোটি করা হয়েছে।
অনুদান বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু আর্ট ফিল্মে অনুদান দেবো আর মেইনস্ট্রিমে দেবো না- অনুদান তো এ জন্য নয়। অনুদান তো সব ধরনের সিনেমার জন্য। সব ধরনের মধ্যে মূলধারা তো হচ্ছে বাণিজ্যিক ছবি- এটা তো সবাইকে স্বীকার করতে হবে।’
যারা চলচ্চিত্রের অনুদান নিয়ে নির্মাণ করেননি তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রথমে নোটিশ দেয়া হয়, এরপর যখন কমপ্লাই করে না তখন মামলা করা হয়। এটার প্রেক্ষিতে অনেকে টাকা ফেরত দিয়েছে এবং দিচ্ছে, আবার অনেকে বানাচ্ছে যারা করতে পারেনি।