পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। সংকটময় একটি সময়ে দেশ সামলানোর গুরুদায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়া লিজ ট্রাস মাত্র ছয় সপ্তাহ পরই হাল ছেড়ে দিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এবং রাজাকেও জানিয়েছেন বলে জানায়। ট্রাস বলেন, যে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কনজারভেটিভ পার্টি তাকে নির্বাচিত করেছিল তা তিনি দিতে পারেননি।
এখন নতুন একজন নেতা নির্বাচন করতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচন হবে বলে জানান ট্রাস। তিনি বলেন, একজন উত্তরসূরি বাছাই না হওয়া পর্যন্ত আমি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকব। অর্থনৈতিক সংকটে দিশাহারা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক সংকট যেন কাটছেই না। নিজ দলের ভেতর চরম আস্থাহীনতার কারণে গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস জনসন।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং গভীরভাবে বিভক্ত কনজারভেটিভ পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর জনসনের স্থলাভিষিক্ত হন ট্রাস।
তিনি মূলত কর হার সর্বোচ্চ কমানো ও জ্বালানির খরচে নাভিশ্বাস ওঠা জনগণকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলের সদস্যদের ভোটে জিতেছিলেন। তবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রচণ্ড চাপের ?মুখে তাকে তার সেই প্রতিশ্রুতি থেকে অপমানজনকভাবে সরে আসতে হয়।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাস ও তার ওই সময়ের অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়াটেং একটি নতুন ‘উন্নয়ন পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছিলেন। যাতে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কর ছাড়ের পাশাপাশি জাতীয় বীমা পরিকল্পনা ও স্ট্যাম্প শুল্কেও ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ব্যাপক সরকারি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা এই পরিকল্পনা স্থবির অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
তবে পরিকল্পনাটি সরকারের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে, পাউন্ডের মান ও সরকারি বন্ডের মূল্য কমিয়ে দেয়। এটি বিশ্ববাজারকে এমন মাত্রায় ধাক্কা দেয় যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য ৬৫ বিলিয়ন পাউন্ডের (৭৩ বিলিয়ন ডলার) একটি কর্মসূচি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
যা নিয়ে বাড়তে থাকা ?রাজনৈতিক চাপ সামাল দিতে ১৪ অক্টোবর কোয়াটেংকে বরখাস্ত করেন ট্রাস।
এরই মধ্যে ট্রাসের বিরুদ্ধে দলীয় এমপিদের বিদ্রোহের গুঞ্জন শোনা যেতে শুরু করে। বুধবার ট্রাসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানের পদত্যাগ সরকারের ভেতরের চরম বিশৃঙ্খলার নগ্ন চিত্র সামনে নিয়ে আসছে।
ব্রাভারম্যান তার পদত্যাগপত্রে সরাসরি ট্রাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। দলীয় বেশ কয়েকজন এমপি ট্রাসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসেন ট্রাস। সেখানে তিনি বলেন, তিনি রাজা চার্লসকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকে তার সরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি
দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাস হলেন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ক্ষমতায় থাকা সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী।।